“আমার মৃত্যুর জন্য লম্বা মাথার কেশবতী কণ্যা খায়রুল লো দায়ী।” এই সুইসাইড নোট লিখে লাইকার বয় জুয়েল যদি ফ্যানের সাথে ঝুলে পরে, অথবা তার বিভৎস লাশ বিছানায় পরে থাকা অবস্হায় পাওয়া যায় তাহলে সাংবাদিক আর পুলিশি কর্মকর্তারা প্রথমেই ঐ খায়রুল লো’কে খুঁজবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা বাংলাদেশ ফৌজদারী কার্য বিধি মোতাবেক Dying Declaration মর্যাদা না পেলেও সুইসাইড নোট হিসাবে প্রথাগত ভাবে সাময়িক বিশ্বাসযোগ্যতা পায় যা নিয়েই মূলত প্রাথমিক তদন্ত চলতে থাকে।
কিন্তু সুইসাইড নোট নিয়ে কেন এমন বিশ্বাসযোগ্যতা ?
পায়, কারন আমাদের সংস্কৃতিতে ধরে নেওয়া হয়, মৃত্যুর মুখে কেও মিথ্যা বলতে পারে না। সে যা লিখে গেছে সেটাকে সত্য ধরে নিয়েই তদন্ত চলে। এখন মৃত্যুটা কিভাবে হলো সেটার উপর নির্ভর করে এই সুইসাইড নোট কতটা গুরুত্ব পাবে। যদি এটা আত্মহত্যা হিসাবে প্রমানিত হয় তবে এই সুইসাইড নোট দিয়ে খায়রুল লো’কে কোনোভাবেই ফাঁসানো যাবেনা। যদি না সে তাকে আত্মহত্যায় কোনোভাবে প্রোরোচীত করে।
আত্মহত্যার প্ররোচনা বলতে কি বোঝায়?
আত্মহত্যার প্ররোচণার ব্যাখ্যা একটু বিস্তৃত। উদাহরণ দিয়ে বললে সকলের নিকট বিষয়টা সংক্ষিপ্ত হবে আশা করি। খায়রুল লো’র সাথে লাইকার বয় জুয়েলের প্রেম ছিল, খায়রুল লো’ প্রেমে প্রতারণা করায় লাইকার বয় ঝুলে পড়লো। এটা প্ররোচণা নয়। কিন্তু ঝুলে পরার জন্য লাইকার বয়কে দড়ি এনে দেয়া কিংবা বিষ খাবার টাকা এনে দেয়া- এটা প্ররোচনা। যাইহোক সুইসাইডি নোটকে অকাট্য প্রমাণ হিসাবে নেয়ার সুযোগ নেই।
পুলিশকে সামঞ্জস্যতাপূর্ণ প্রমাণ ও তথ্যাদিও সংগ্রহ করতে হবে। পুলিশ যদি প্রমাণ করতে পারে লাইকার বয়ের আত্মহত্যা খায়রুল লো’র প্ররোচনাতেই ঘটেছে, তবেই আদালত সুইসাইড নোটকে বিবেচনায় আনবে। সেক্ষেত্রে খায়রুল লো’র ৬ মাস- থেকে ২৪ মাসের সাজা হতে পারে। আর লাইকারের মৃত্যু যদি খুন জনিত হয় তবে নীলাঞ্জনার যতটুকু অপরাধ প্রমাণ হবে ততটুকুর জন্য ১০ বছর মেয়াদ থেকে যাবজ্জীবন কিম্বা মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত হতে পারে। আর মিডিয়া বা সোশ্যাল মিডিয়া যদি এই হ্যান্ডনোটের ছবি পেয়ে যায় তাতে নীলাঞ্জনা দোষি না নির্দোষ তা প্রমাণের আগেই নীলাঞ্জনার জীবন হেল হয়ে যাবে।
ডেথ বেড কনফেশনে দায়ী করলে কি হবে?
ডেথ বেড কনফেশনে (মৃত্যুশয্যায় থেকে কাওকে দায়ী করে মৃত্যুবরণ করলে) কেউ যদি কাওকে অপরাধী বলে স্বীকার করে তাহলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফৌজদারি বিধি অনুযায়ী, ডেথ বেড কনফেশন নেবেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মরত কোনো কর্মকর্তা। তার সাথে ডেথ বেড কনফেশন লিপিবদ্ধ করার সময় এক বা একাধিক সাক্ষী থাকা জরুরি।
আরও পড়ুন,
- আপনি কেনো রাস্তার বামদিক ব্যবহার করেন?
- “ফেয়ার এন্ড লাভলী” থেকে হঠাৎ কেনো “গ্লো এন্ড লাভলী”
- বাংলাদেশের আয়তন কত? যেভাবে হলো ২,৪৭,৬৭৭ বর্গ কিঃমিঃ
কর্মকর্তা আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন যে যিনি মৃত্যুশয্যায় আছেন তিনি তার উক্তি কোনো পারিপার্শ্বিক চাপের জন্য দিচ্ছেন কি না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, “কুদ্দুস” যদি মৃত্যুশয্যায় থাকাকালীন তার সামনে উপস্থিত থাকা “আক্কেল আলী” এর ভয়ে অথবা “আক্কেল আলী” এর আতঙ্ক যদি কুদ্দুসের কারণে এক ধরনের ভয়ের সৃষ্টি করে, তাহলে ঐ স্বীকারোক্তি গ্রহণযোগ্য হবে না। অবশ্যই প্রভাব মুক্ত স্বীকারোক্তি হতে হবে। এই তিনটি শর্ত ঠিক রেখে মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যাক্তি যা বলবেন তাই সত্য বলে ধরে নেবে কোর্ট। কারণ কোর্ট মনে করেন যে, মৃত্যুশয্যায় শায়িত ব্যাক্তি কখনোই মিথ্যা বলতে পারেন না।
আরও পড়ুন,
- ইন্টারনেট আসক্তি ছুঁড়ে ফেলুন চার বৈজ্ঞানিক উপায়ে!
- ইকোনো যুগঃ যেভাবে হারিয়ে গেলো এক প্রজন্মের নস্টালজিয়া
তবুও এ কনফেশন শতভাগ মেনে নেয়ার সুযোগ নেই, সকল শর্ত মানবার পরেও বেশ ক’বার তদন্তের পর প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে তবেই শাস্তি পাবে স্বীকারোক্তি দেয়া দায়ী।
মোটকথা এইসব চূড়ান্ত প্রমান হিসেবে ব্যবহৃত হয় না শুধুমাত্র আলামত হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ আলামত হিসেবে।
সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী আপনি নিজেও যদি বলেন যে আপনি অমুককে মেরে ফেলেছে, তবুও সেই জবানবন্দি অনুযায়ী রায় হবেনা। তদন্ত প্রধান শর্ত। সুতরাং কেউ মিথ্যা নোট লিখে গেলে বড়জোর হয়রানী হবে। এর বেশি কিছু নয়।
[ করোনা সংকটের মধ্যেই আলোচনায় মানুষের মস্তিষ্ক খাওয়া অ্যামিবা। যার সংক্রমণে মৃত্যুর হার ৯৭শতাংশ। মানুষের মস্তিষ্ক খাওয়া অ্যামিবা সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন,
মানুষের মস্তিষ্ক খাওয়া অ্যামিবা আসলে কি? কিভাবে সুরক্ষিত থাকবেন? ]