মানব সৃষ্টির বিস্ময় “চিচেন ইতজা”এর ইতিহাস

অব্যয় মিডিয়ায় চিচেন ইতজা (2)

চিচেন ইতজা একটি বিরল খেতাব অর্জন করা নিদর্শন যা একই সাথে নব্য সপ্তাশ্চর্জ এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। আজ অব্যয় মিডিয়ায় জানবো মায়া সভ্যতার গড়া বিখ্যাত নগরী চিচেন ইতজা সম্পর্কে।

চিচেন ইতজা কোথায়?

মায়া সভ্যতার একটি বিখ্যাত শহর চিচেন ইতজা। এই অবিশ্বাস্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি বর্তমান মেক্সিকোর ইউকাটান অঞ্চলে অবস্থিত। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় শহরটি তৎকালীন সময়ের তুলনায় অতি আধুনিক। যা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের জন্য রোমাঞ্চের জন্ম দেয়।

অব্যয় মিডিয়ায় চিচেন ইতজা (10)

চিচেন ইতজা শব্দের অর্থ “কুয়ায় যাবার মুখ”। ধারণা করা হয় তখন ঐ অঞ্চলে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ কূয়া থেকে থেকে এমন নামকরণ করা হয়েছে। এই দর্শনীয় স্থাপনার ও অঞ্চলের নির্মাণকাল নিয়ে ভূতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিকদের বিবরণ গুলোর বেশ মতভেদ লক্ষ্য করা যায়।

আরও পড়ুন,

চিচেন ইতজা এর শুরু কিভাবে?

ঐতিহাসিকদের ধারণা অনুযায়ী ৬০০ থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত চিচেন ইতজায় মায়া সভ্যতার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। এটি মায়া সভ্যতার বৃহত্তম শহর গুলোর মধ্যে অন্যতম। যার আয়তন ছিলো প্রায় ৫ বর্গকিলোমিটার, যেখানে মোট জনবসতি ছিলো প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের। এই ছোট আয়তনের মধ্যেও মায়ান’রা তৈরি করে রেখেছিলো বিস্তৃত বাণিজ্যিক আবাসিক এবং পাথরের তৈরি রহস্যময় কাঠামো।

অব্যয় মিডিয়ায় চিচেন ইৎজা (3)

সে সময়ের চেয়ে আধুনিক এবং পরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণে মায়া সভ্যতার লোকেদের বিশেষ দক্ষতা ঠিক কিভাবে পেয়েছিলো তা আজও রহস্যজনক। চিচেন ইতজা শহরের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার ভবন ও অবকাঠামো। এছাড়াও রয়েছে পাকা রাস্তা ও তৎকালীন সময়ের হিসেবে বিষ্ময়কর ফুটপাত। ঐতিহাসিকেরা বিষয়টিতে বেশ অবাক হয়েছেন, কারণ তখন ইউরোপের কোন শহরেরও এত উন্নত রাস্তা ছিল না।

মানব সৃষ্টির বিস্ময় “চিচেন ইতজা”এর ইতিহাস

চিচেন ইতজা শহরের প্রধান আকর্ষণ হলো “এল কাস্তিলো” নামের পিরামিড আকৃতির একটি দূর্গ। এই পিরামিডের উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট এই পিরামিডের শীর্ষে আরোহণ করার জন্য রয়েছে ৩৬৫ টি সিড়ি যা বছরের ৩৬৫ দিন নির্দেশ করে। মায়ানরা ৩৬৫ দিনে বর্ষের প্রচলন শুরু করেছিল।

তারা জ্যোতির্বিদ্যায় এতটাই পারদর্শী ছিলো যে, কোনো ধরনের যন্ত্র ছাড়াই সেসময়ের লোকজন সূর্য গ্রহণের ভবিষ্যৎবাণী করতে পারতো সূর্য গ্রহণের সময়ে এখানে চলত বিশাল নরবলির এক উৎসব। চিচেন ইতজার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সেনোট নামের কূপ, ধারণা করা হয় এই কূপের সাথে ভূগর্ভস্থ কোনো নদীর সংযোগ ছিল। এই কূপটি ছিল শহরের জনগন ও প্রাণীদের একমাত্র সুপেয় পানির উৎস।

মানব সৃষ্টির বিস্ময় “চিচেন ইতজা”এর ইতিহাস

চিচেন ইতজার অদ্ভুত সব স্থাপনা

আশ্চর্যজনকভাবে সাম্প্রতিক সময়ে এই কূপ থেকে প্রচুর স্বর্ণ এবং মূল্যবান বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। তাছাড়া এই কুপে বহু মানুষের হাড় এবং মাথার খুলিও পাওয়া গেছে। এ থেকে ধারণা করা হয় এসব লোকদেরকে মায়ান বৃষ্টির দেবতা “চাক” এর নামে বলি দেওয়া হয়েছিল। মায়ান’রা নরবলি দেবার জন্য ইতিহাসে কুখ্যাত। চিচেন ইতজার আরো বিখ্যাত কিছু জায়গার মধ্যে আছে “দ্যা গ্রেট বল কোর্ট”। যেখানে এক ধরনের বল খেলা হতো এই খেলায় যে দল হেরে যেতো তাদেরকেও বলি দেওয়া হতো।

আরও পড়ুন,

এছাড়াও “স্যাকবে নাম্বার ওয়ান” ঐ শহরের পাকা রাস্তা গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই রাস্তার প্রায় ৯০০ ফুট। গ্রুপ অফ থাউজেন্ড কলাম নামক স্থাপনা থেকে ধারণা করা হয় অতীতে এগুলো কোনো ছাদকে ধরে রেখেছিলো।

মানব সৃষ্টির বিস্ময় “চিচেন ইতজা”এর ইতিহাস

এল মার্কাডো নামের এক জায়গা শহরের বাজার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এছাড়া আরও বেশকিছু কাঠামোর মধ্যে এল ওসারিও নামের মন্দিরটিও বেশ বিখ্যাত।

কেমন আছে চিচেন ইতজা?

মেক্সিকান সরকার চিচেন ইতজা শহরটিকে বেশ যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করে রেখেছে। সে কারণে প্রাচীন এই স্থাপনা সম্বলীত এই শহরটিকে আজও জীবিত।

মানব সৃষ্টির বিস্ময় “চিচেন ইতজা”এর ইতিহাস

ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরা এই অঞ্চলে আগমন এবং আগ্রাসন শুরু করার পর থেকে চিচেন ইতজা সহ মায়া সভ্যতার আরও বেশ কিছু প্রাচীন শহর বিলুপ্ত হতে শুরু করে।

চিচেন ইতজা ১৯৮৮ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ২০০৭ সালে এটি নতুন সপ্তাশ্চর্যের একটি হিসেবে জায়গা করে নেয়। এসব কারণেই দিন দিন চিচেন ইতজার প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমেই বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালে চিচেন ইতজা মেক্সিকোর সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করা দর্শনীয় স্থানের তালিকায় শীর্ষে উঠে আসে। প্রতিবছর প্রায় ২০ লক্ষ লোক এই দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করে।

 

[ কেউ আত্মহত্যা বা অন্য কোনো কারণে মৃত্যুর আগে যদি নিরপরাধ আপনাকে দায়ী করে নোট লিখে যায়, তাহলে আপনার কি হবে ভেবে দেখেছেন কি?
কি হবে, কেউ মৃত্যুর পূর্বে আপনাকে দায়ী করে সুইসাইড নোট লিখে গেলে?

“ফেয়ার এন্ড লাভলী” থেকে হঠাৎ কেনো “গ্লো এন্ড লাভলী”! ]