শিক্ষনীয় গল্প : হয়ত হ্যা হয়ত না থেকে কি শিক্ষা পেলেন চাষী?

শিক্ষামূলক গল্প ও ঘটনা

উপমহাদেশের মানুষ নতুন বাংলা শিক্ষনীয় গল্প থেকে কিছু না কিছু শিখতে চায়, আজ এক বিখ্যাত গল্প যা কিনা লাখো মানুষের জীবন সম্পর্কে ধারণা পাল্টাতে সাহায্য করেছে তা শুনবো।

একটি শিক্ষনীয় গল্প

এক গ্রামে একজন অত্যন্ত জ্ঞানী বৃদ্ধ লোক বাস করতেন। গ্রামের লোকেরা তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য সেই বৃদ্ধ লোকটার কাছে পরামর্শ চাইতে যেতেন। একদিন গ্রামের একটা কৃষক তার কাছে গিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, “দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন, আমি ভীষণ বিপদে পড়েছি। আমার ষাঁড়টি মারা গেছে এবং এখন মাঠের লাঙ্গল-চষার জন্য আমার কাছে কোন পশু নেই এর থেকে খারাপ কিছু আমার সাথে হতেই পারেনা।”

উত্তরে সেই বৃদ্ধ লোকটি বললেন “হয়তো হ্যাঁ, হয়তো না“। এই কথাটা ছাড়া তিনি আর কোনো কথা বললেননা।

সেই কৃষক তারপর তার গ্রামে ফিরে যায় এবং গ্রামবাসীদের বলে যে সেই বৃদ্ধ জ্ঞানী ব্যক্তিটি পাগল হয়ে গেছে। কারন ঐ কৃষক জানতেন সত্যিই এর থেকে খারাপ আর কিছু হতেই পারে না। তাহলে সেই বৃদ্ধ লোকটি কেন এটা মানতে চাইছেন না?

কিন্তু তার পরের দিন তার জমির পাশেই একটি সুস্থ সবল মালিকহীন ঘোড়া দেখতে পায়। ঐ চাষীর কাছে তখন ক্ষেতের হাল টানার জন্য কোনো পশু না থাকায় ঘোড়াটাকে দেখামাত্রই চাষীর মাথায় হাত ঐ ঘোড়াটাকে ধরে চাষের কাজে লাগানোর চিন্তা মাথায় এলো এবং সেটাই করে। তার এইটা করতে পেরে ভীষণ খুশি হয়, কারণ লাঙল টানার কাজ আগের চেয়ে অনেক সোজা হয়ে যায়।

অসাধারন শিক্ষনীয় গল্পএরপরে ঐ চাষী জ্ঞানী বৃদ্ধ লোকটির কাছে ক্ষমা চাইতে তার নিকট ফিরে যায়। আর বলেন, আপনি ঠিকই বলেছিলেন আমার ষাঁড়টি মারা যাওয়ায় বরং ভালোই হয়েছে। এটা আমার কাছে অভিশাপ রূপে না ওসে আশীর্বাদেই পরিণত হয়েছে। কারণ যদি আমার ষাঁড়টি মারা যেত তাহলে আমি কখনো ঘোড়াটা ধরার কথা ভাবতাম না। এবার অন্তত আপনাকে আমার সাথে একমত হতেই হবেন যে এটা আমার সাথে সবথেকে ভালো যা হতে পারে সেটাই হয়েছে।

উত্তরে ঐ বৃদ্ধ জ্ঞানী লোকটি আবারো বললেন, “হয়ত হ্যা, হয়ত না“।

– “আবারো সেই একই কথা!!
চাষীটি মনে মনে নিজেকে বলে উঠলো।
এবার চাষীটি নিশ্চিত যে বৃদ্ধ লোকটি পাগল হয়ে গেছে।

কিন্তু এবারও কি হতে চলেছে তা ঐ চাষীর জানা ছিলোনা। কিছুদিন পর ঐ চাষীর ছেলেটি ঘোড়া চড়তে গিয়ে পড়ে যায় এবং পড়ে গিয়ে তার হাত-পা ভেঙে যায়। ফলে সেই চাষীকে চাষের কাজে সাহায্য করার মত আর কেউ রইলোনা।

বাংলা শিক্ষামূলক গল্প অসাধারন শিক্ষনীয় গল্প

তাই মনে মনে বলে উঠল, “এবার তো আমরা না খেতে পেয়ে মারা যাবো, আরো একবার চাষীটি সেই বৃদ্ধ জ্ঞানী লোকটির কাছে গেলো। আর বললো, ” আপনি কি করে জানলেন আমার ঘোড়া ধরাটা আশীর্বাদ ছিলোনা? আপনি আবারো ঠিক বলেছিলেন”। এই বলে সে তার ছেলের করুণ পরিণতির কথা খুলে বললেন। আর বললেন, “এর চেয়ে খারাপ হয়ত আমার সাথে আর কিছু ঘটতেই পারেনা। এবার আমার সাথে তো আপনার একমত হতেই হবে”

আরও পড়ুন,


বরাবরের মতো ঐ বৃদ্ধ জ্ঞানী লোকটি চাষীটির দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আবারও বলে উঠলেন,” হয়ত হ্যা, হয়ত না”।

গরিব চাষী এসব মেনে নিতে না পেরে আবারো মুখ ভার করে গ্রামে ফিরে গেলো।
এর ঠিক পরের দিনই ঐ দেশের সৈন্যবাহিনী এসে সে গ্রামে যত যুবক ছিলো তাদের সবাইকে নিয়ে বাধ্যতামূলক যুদ্ধে নিয়ে গেলো।

শুধুমাত্র সেই ছেলেটি সেই গ্রামের একমাত্র যুবক ছিল যাকে নিশ্চিত হেরে যাওয়া ঐ যুদ্ধে যুদ্ধে যেতে হয়নি। এই সাধারণ শিক্ষনীয় গল্পটি আমাদের জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই শিক্ষা দেয়

শিক্ষনীয় গল্প থেকে যা শেখার আছে



লেসন নাম্বার ওয়ান – অনিশ্চয়তায় ভীতি নয়

এই শিক্ষামূলক গল্পটি থেকে আমরা বুঝতে পারি সত্যি বলতে আমরা কখনই জানিনা ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে, যেখানে আমরা মনে করি আমরা তা জানি। আমরা একটা ছোট ব্যাপারকেও অনেক বড় ভেবে বসি।
কি কি খারাপ হতে পারে সে সমস্তকিছু মনে মনে ভাবতে শুরু করে দিই।

কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা ভূল ভাবি। যদি আমরা ভূল কিছু না ভেবে শান্ত থেকে পজিটিভ ভাবতে শুরু করি তাহলে এটা স্বাভাবিক যে, যা কিছ্য হয় তা ভালোর জন্যই হয়।
নতুন শিক্ষামূলক গল্পলেসন নাম্বার টু – নাথিং ইজ গুড অর ব্যাড

আমরা জানিনা কোনো ঘটনা আমাদের জন্য ভালো নাকি খারাপ, এটা আমাদের ধারণারও বাইরে যে এর ভবিষ্যৎ পরিণতি কি হতে চলেছে। সেটা একমাত্র সময়ই আমাদের বলে দেয়।

শুরুর দিকে কোন একটা ঘটনা খুব ভালো বলে মনে হলেও কিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর হয়তো আপনি সেটা যেমন ভেবেছিলে এমনটা হয় না। একইভাবে কোন জিনিস বা ঘটনা শুরুতে হয় খুব খারাপ বলে মনে হলেও একটা সময় পরে হয়ত দেখা যায় সেটা আপনার জীবনের সবথেকে ভালো জিনিস গুলোর মধ্যে থেকে একটা হয়েছে।

সমস্ত কিছু প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে তাই কোন ঘটনাকে নির্দিষ্টভাবে ভালো বা মন্দ বলে বিচার করার সুযোগই থাকেনা।
নতুন শিক্ষামূলক গল্পলেসন নাম্বার থ্রী – পরিবর্তনকে মেনে নিন

বেশিরভাগ সময়ই আমরা পরিবর্তনগুলোকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। এমনকি জিনিস গুলোর উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই সেগুলোকেও আমরা পরিবর্তন হওয়া থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। যেখানে ব্যর্থ হই বলে হতাশা ও দুশ্চিন্তা এগুলো আমাদের মনের মধ্যে বাসা বাঁধে। আর আমরা পুরো ছবিটা উপলব্ধি করতে পারিনা।

যদি আমরা আমাদের মনটাকে শূন্য করে হৃদয়ের দরজা টা খুলে দিই ও এই শিক্ষনীয় গল্পটা থেকে শিক্ষা নেই তাহলে আমাদের ভিতরে যে জ্ঞান আছে তার সাহায্যে আমরা ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থগুলোকে দূরে সরিয়ে আসল ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করতে পারি। তার জন্য আমাদেরকে আগে বর্তমান মুহূর্তটা গুরুত্ব বুঝতে হবে। আমাদেরকে সম্পূর্ণভাবে বর্তমান মুহূর্তে বাঁচতে শিখতে হবে যাতে করে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ও অতীতের দূঃখের মধ্যে আমরা নিজেদের হারিয়ে না ফেলি।
তাই যখনই আপনার সাথে ভালো বা মন্দ কিছু ঘটবে তখন শান্ত হয়ে বসে নিজেকে নিজে বলুন “দেখা যাক কি হয়“।