আপনি যদি সফল উদ্যোক্তা হতে চাই মনোভাবের ব্যক্তি হয়ে থাকেন কিংবা ভালো ব্যবসায়ী হতে হলে কি করবেন তা নিয়ে চিন্তিত থাকলে, কিছু বিষয় একটু ভিন্নভাবে দেখতে হবে যা এই কমপ্লিট গাইডলাইনে উদাহরন-সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে সবকিছুর আগে আপনার সফল হওয়ার প্রধান মূলমন্ত্র হলো, প্রথমেই আপনাকে ত্যাগ স্বীকার করা জানতে হবে। সেইসাথে শিখে রাখতে হবে চ্যালেঞ্জ নেয়া ও অবজেকশন মোকাবিলা করার দক্ষতাগুলো। এমনকি ডিজিটালাইজেশনের এই যুগেও মোবাইল কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থেকে দিনের পর দিন নিজের মনোবলকে একটি লক্ষ্যে স্থির রেখে মনকে পজিটিভ রাখা।
আরও পড়ুন : ইন্টারনেট আসক্তি ছুঁড়ে ফেলুন চার বৈজ্ঞানিক উপায়ে!
হ্যা, উপরের কথাগুলোর সাথে আমরা মোটামুটি কমবেশি সবাই পরিচিত, তবে কথাগুলো সত্য যে, নব্য উদ্যোক্তা হতে চাইলে প্রথম প্রথম এমন সব বাধার সম্মুখীন আপনিও হতে পারেন, যেগুলোর কথা আপনি আগে চিন্তাও করেননি।
সুতরাং, আপনি যদি উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে চান, তবে প্রথমেই ত্যাগ স্বীকার করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন, সাথে চ্যালেঞ্জ নেয়ার মানসিকতা রাখাটা তো বাধ্যতামূলক।
উদ্যোক্তা হতে হলে কি করবেন? (ভূমিকা)
সমীক্ষা বলছে ১০০ টা স্টার্ট আপের মধ্যে ৯০ টা স্টার্ট-আপ’ই ফেইল হয়ে যায়, এটা জানার পরেও অসংখ্য মানুষ রোজ এই খেলায় কোমড় বেধে নেমে পড়ে। এটা মনে করে যে তার আইডিয়াটিই নেক্সট বিলিয়ন ডলার বিজনেস দাঁড় করাবে।
যদি আপনিও তাদের মতোই একজন হন তাহলে হয়ত ইতিমধ্যেই স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য কোনো আইডিয়া মাথায় নিয়ে কাজে লেগে পড়েছেন।
কিন্তু সফল উদ্যোক্তাদের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় কেবল ভালো আইডিয়াই সফল উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে যথেষ্ট না। অনেক ছোট ছোট ফ্যাক্টরও এখানে বেশ প্রভাব ফেলে। যেমন আপনার কমিউনিকেশন স্কিল, আপনার পারিবারিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থান, আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন ইত্যাদি।
জুম অ্যাপ : যে গোপন সূত্র ধরে গুগল-মাইক্রোসফটকে ছাপিয়ে সাফল্যের শীর্ষে
তাই সবসময় যে একটি ভালো আইডিয়াই সফল বিজনেস দাঁড় করাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
তবে একটা ভালো খবরও আছে, আর সেটা হলো; আপনি যে-ই হোন না কেনো সফল উদ্যোক্তা হতে হলে যা প্রয়োজন তার জন্য আপনার কাছে একটা মৌলিক গুণ অবশ্যই আছে। যেটা আপনাকে সফল কৃষি উদ্যোক্তা থেকে ই কমার্স উদ্যোক্তা পর্যন্ত যেকোনো কিছুই করতে অনেকখানি সাহায্য করতে পারে। এখন যদি আপনি আপনার সেই মৌলিক গুণগুলো চিহ্নিত করে সেটাকে সঠিক কাজে লাগাতে পারেন তবে আপনার স্বপ্ন সফল হওয়া থেকে কেও আটকাতে পারবেনা।
তো আর দেরি না করে চলুন জেনে নিই উদ্যোক্তা হতে হলে কি করবেন –
উদ্যোক্তা হতে চাই আনফেয়ার এডভান্টেজ
আপনি নারী হোন কি পুরুষ হোন অবশ্যই কোনো না কোনো গুণ নিয়েই জন্মেছেন। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই গুণ বা এডভান্টেজ ভীষণই কমন থাকে। যেমন কোন ধনী পরিবারে জন্ম নেয়া কিংবা দেখতে খুবই সুন্দর বা হ্যান্ডসাম হওয়া।
স্ন্যাপচ্যাট প্রতিষ্ঠায় আনফেয়ার এডভান্টেজ
এর একটি খুব ভালো উদাহরণ হতে পারে স্ন্যাপচ্যাট ফাউন্ডার ইভান স্পীগাল। মাত্র ২৫ বছর বয়সে নিজের আইডিয়াকে কাজে লাগিয়ে মাত্র একটি টেক কোম্পানি দিয়েই কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন। যেহেতু তার বাবা-মা খুবই ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন, তাই শুরু থেকেই তার কাজে টাকার প্রতুলতা ও অন্যান্য সফল ব্যক্তিদের সাথে উঠাবসা, এমনকি বিভিন্ন ইনভেস্টরদের সাথে পরিচয় হওয়ার সুবাদে তাকে কখনোই তেমন বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।
এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে স্ন্যাপচ্যাট আইডিয়াটা খুবই অসাধারণ, কিন্তু এটাও সত্যি স্পিগেল যে পারিবারিক সুবিধাগুলো পেয়েছিলো সেগুলোর কারণেই তার স্ন্যাপচ্যাট এত অল্প সময়ে এত-দ্রুত মার্কেট দখল করতে পেরেছে।
কি হবে, যদি কেউ মৃত্যুর পূর্বে আপনাকে দায়ী করে সুইসাইড নোট লিখে যায়?
কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনার যদি ধনী পরিবার ও পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে উঠাবসা না থাকে তবে আপনি কখনোই ধনী হয়ে উঠতে পারবেন না। এরকম প্রচুর মৌলিক গুণ আছে যেগুলো ধনী হওয়া কিংবা গুড লুকিং হওয়ার মতো একেবারে চোখের সামনে থাকেনা ঠিকই কিন্তু সেগুলো এতটাই পাওয়ারফুল হয়ে থাকে যে আপনি সেগুলো কাজে লাগিয়েই ব্যবসায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
আপনি আজ পর্যন্ত যতগুলো সেল্ফ-মেইড কোটিপতির কাহিনী শুনেছেন তাদের গল্প গুলোর কথা মনে পড়লে হয়ত কিছুটা ধারণা পাবেন এ ব্যাপারে।
ওয়ারেন বাফেট এর জীবনে যেভাবে আসলো সাফল্য
গত ৩০ বছরের বিলিওনিয়ারদের তালিকায় যার নাম সবচেয়ে ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ কয়েকজন ধনীর তালিকায় স্থান দখল করে আছে সেই ওয়ারেন বাফেটও মাত্র ১২ বছর বয়সে অন্য এলাকায় গিয়ে চিপস বিক্রি করতেন। গণিতে অসাধারণ দক্ষতার সুবাদে তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টক মার্কেট লিডার। প্রায় ৫০ বছর বিনিয়োগ আর জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছেন এই পর্যায়ে। মূলত অধ্যাবসায় ও শেখার তীব্র আগ্রহ তাকে এই অবস্থানে নিয়ে গেছে। আজ অভিজ্ঞতা ও জীবনী নিয়ে ওয়ারেন বাফেট এর উক্তি গুলো সবজায়গায়ই সমাদৃত।
তো আপনার আনফেয়ার অ্যাডভান্টেজটা স্ন্যাপচ্যাটের প্রতিষ্ঠাতা স্পীগল এর মতো জন্মগত এডভান্টেজ হোক বা ওয়ারেন বাফেটের মতো অধ্যাবসায়ের মতোই হোক, কিংবা দুটোই হোক। আপনার কাজ শুধু সেটাকে বুঝে তার সঠিক ব্যবহার করা।
টাকা ছাড়া ব্যবসা হয় কি?
টাকাই সবকিছু না ঠিকই, কিন্তু এটা ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব হয়না। আপনারও কি এটা মনে হয়, যদি আপনার কাছে অনেক টাকা থাকতো তাহলে আপনার জন্য ব্যবসা শুরু করতে খুব সহজ একটা ব্যাপার হয়ে যেত। হ্যাঁ, আপনি একেবারে ভুল না, শুরুতে টাকা থাকলে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের এডভান্টেজ দিয়ে থাকে। কেননা বেশিরভাগ স্টার্ট আপ বা নতুন উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে অনেকদিন পর থেকে লাভ শুরু হতে থাকে। ততদিন অবধি বিজনেসের জন্য কর্মীদের বেতন দেওয়া, নিজের খরচ চালানো এমনকি অফিসের ইলেকট্রিক বিল মেটানোর জন্য হলেও টাকা দরকার।
তাই শুরু থেকেই যদি কিছু টাকা থাকে তাহলে অনেকখানি সাপোর্ট পাওয়া যায়। সাধারণত বিজনেস স্পেশালিস্টরা “উদ্যোক্তা হতে হলে কি করবেন” এর জবাব দিতে গেলে বলে থাকেন কোন বিজনেস স্টার্ট করার আগে সেই বিজনেস চালানোর জন্য ৬ থেকে ১৮ মাসের খরচ হাতে রেখেই সে ব্যবসায় নামা উচিত।
ইলন মাস্ক এর উদ্যোক্তা উন্নয়ন নির্দেশিকা
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ইলন মাস্ক যখন পেপাল বিক্রয় করে স্পেস এক্স বিজনেস গড়ে তোলেন তখন তিনি পেপাল বিক্রির পুরো টাকাই নতুন ব্যবসাতে ইনভেস্ট করে দেন, এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন কোনো মুনাফা করতে পারেনি তবুও ইলন মাস্কের জমানো ঐ টাকায় অনায়াসেই সেই বিপুল খরচ মেটানো সম্ভব হয়েছিলো। এছাড়াও তারই অন্য একটি প্রতিষ্ঠান টেসলা পরিচালনা করতেও একজন উদ্যোক্তা হিসেবে তার পূর্বের অভিজ্ঞতা ও নির্দেশিকা অনুসরন করে থাকেন।
যদি আপনার কাছে ইলন মাস্ক এর মতো অত মূলধন না থাকে, তবে কোন সমস্যা নেই। যদি আপনার অত্যন্ত ধনী ব্যক্তি যারা আপনার স্টার্ট-আপের জন্য সম্ভাব্য ইনভেস্টর হতে পারে এরকম লোকেদের সাথে ভালো সম্পর্ক থেকে থাকে। মার্ক জুকারবার্গ যখন প্রথম ফেইসবুক শুরু করেছিলেন তখন তিনি ঐএডভান্টেজ কাজে লাগিয়েই তার বন্ধু ও পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ৫০ হাজার ডলারের বেশ বড় একটি মূলধন জোগাড় করে ফেলেছিলেন।
যদি আপনার হাতে ব্যবসায়ের শুরুতেই কিছু গচ্ছিত টাকা থাকে, তবে সেটা যেমন আপনাকে বিজনেস শুরু করতে সাহায্য করবে, তেমনি সেই বিজনেসটা যদি কোনো কারণে সাময়িক মন্দায়ও যায় তখন অনেকখানি সাহায্য করবে। এজন্যই ধনী ব্যক্তিরা যদি কোনো ব্যবসায়ে কিছু টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তবু তাদের কপালে তেমন চিন্তার ভাজ পড়েনা। ফলস্বরূপ তারা খুব সহজে রিস্ক নিতে পারেন।
কম টাকায় ব্যবসা আদৌ হয়?
এবার আপনি যদি এটা ভেবে হতাশ হতে শুরু করেন যে, আমার কাছে না তো প্রচুর জমানো টাকা আছে, না আমার বড়লোক কোনো আত্মীয় আছে, যে আমাকে টাকা ধার দিবে। তো আমি আপনাকে বলব চিন্তার কিছু নেই, যে কোন বিজনেস শুরু করতে হলেই যে শুরুতে প্রচুর টাকা থাকতেই হবে সেটা সত্যি না। সে রকম ব্যাপার হলে আপনি এরকম ব্যবসা শুরু করতে পারে্ যেখানে শুরুতেই বিশাল অঙ্কের টাকা থাকার প্রয়োজন হয় না এবং কাস্টমারদের থেকে সাথে সাথে টাকা পকেটে চলে আসে।
যেমন ধরুন কম টাকার একটি অনলাইন স্টোর / ব্যবসা। অথবা যদি আপনার স্টার্ট আপ আইডিয়াটা খুবই ভালো হয়, ইনভেস্টরদের থেকেও তা কালেক্ট করতে পারেন। যাই হোক হাতে নগদ কিছু পুঁজি থাকলে সেটা একটা অনেক বড় অ্যাডভান্টেজ দিয়ে থাকে ঠিকই। কিন্তু শুধুমাত্র প্রচুর টাকা নেই বলে যে নিজের উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন সফল করতে কাজ শুরু করবেন না এটাই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বোকামি।
নিজের ও ভোক্তার মন বুঝুন
EQ আর IQ দুটোই আপনার উদ্যোক্তা হতে চাই মনোভাবকে সফল করে তোলার জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলে আপনার ক্লাসেও নিশ্চয়ই এমন অনেক বন্ধু ছিল যে কোন একটা জিনিস খুব দ্রুতই শিখে নিতে পারতো। এমন ব্যক্তিরা বড় হয়ে যখন কোনো উদ্যোগ নেয়া শুরু করে তাহলে তাদের সফল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি হয়ে থাকে। কারণ স্টার্টআপ শুরু করতে হলে প্রতিদিন নতুন নতুন স্কিল শিখতে থাকতে হয়, তাই যারা কোন নতুন স্কিল খুব দ্রুত শিখে নিতে পারে তারা অনেকখানি এগিয়ে যায়।
উদাহরণ হিসেবে গুগোলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ ও সার্গেই ব্রিন এর গল্পটা আমাদের অব্যয়ের এই ব্লগ লিংকে ক্লিক করে পড়ে আসতে পারেন।
কিন্তু একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলবার জন্য কেবল ভালো IQ থাকাই যথেষ্ট না। ভালো EQ অর্থাৎ লোকজনদের অনুভূতি বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকাও অত্যন্ত জরুরী।
ভেবে দেখুন আপনারও এমন কিছু বন্ধু আছে যারা খুব সহজেই নিজের কথার মধ্য দিয়ে অন্যকে প্রভাবিত করতে পারে, অন্যের মনটা খুব ভালো বুঝতে পারে এবং তাদেরকে কেউ সহজে বোকা বানাতে পারে না। যদি থাকে তাহলে আপনার উচিত তার কাছ থেকে এই স্কিলগুলো আয়ত্ত করার টোটকা শিখে নেয়া। কারণ এই দক্ষতাগুলো ব্যবসায়ে খুবই কাজে লাগে।
পড়ার সাজেশনঃ
- শিক্ষনীয় গল্প : হয়ত হ্যা হয়ত না থেকে কি শিক্ষা পেলেন চাষী?
- পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে জর্জ বার্নার্ড ‘শ এর কালজয়ী উক্তি
- কি হবে, যদি কেউ মৃত্যুর পূর্বে আপনাকে দায়ী করে সুইসাইড নোট লিখে যায়?
স্টিভ জবস ও ওজনিয়াকের মহাকাব্য
স্টিভ জবস এর কথাই ধরুন, অ্যাপল কম্পিউটার তৈরিতে তার অবদানের চেয়ে অ্যাপল এর সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াকের অবদান ঢের বেশি। মূলত স্টিভ জবস কথা বলে অন্যকে প্রভাবিত করা ও কাস্টমারদের মন বুঝতে পারার অসাধারণ দক্ষতার কারণেই অ্যাপল এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জবস এর নাম জানি, কিন্তু স্টিভ ওজনিয়াক এর দূর্বল কমিউনিকেশন স্কিল ও ইন্ট্রোভার্ট মানষিকতার কারণে আজীবন পর্দার আড়ালেই রয়ে গিয়েছিলেন।
নিজেকে ক্রেতা ভেবেই ব্যবসাকে বিচার করুন
নিজের ইউনিক আনফেয়ার অ্যাডভান্টেজ খুঁজে বার করার জন্য নিজের কাস্টমারের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে বোঝার চেষ্টা করুন। নিজের কাস্টমারদের দিক থেকে ভেবে আপনি অনেক ভ্যালুয়েবল ইনসাইট পেতে পারেন।
যেমনটা উইল সু করেছিলেন। নিজ কোম্পানি ডেলিভারু’এ তার কাস্টমারদের মন বুঝতে নিয়োগ দেয়া কর্মীদের পাশাপাশি নিজেই বাইকে চড়ে পণ্য ডেলিভারি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন একজন ডেলিভারি বয় ঠিক কি কি চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হয়।
আপনিও চাইলে এমন কিছু করতে পারেন তবে সব সময়ে এত বড় স্টেপ নেয়ার দরকার পড়ে না। আপনি যদি নিজের কাস্টমারদের অবজার্ভ করতে থাকেন, তাদের সাথে কথা বলে তাদের জেনুইন ফিডব্যাক কালেক্ট করতে পারেন, মতামত নিতে পারেন এবং সেই মতো এক এক করে তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন তবে এই জিনিসটা আপনাকে আপনার কম্পিটিটরদের থেকে অনেক এগিয়ে রাখবে।
সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় সঠিক সিদ্ধান্ত
আপনার উদ্যোক্তা হতে সফল হবার জন্য সঠিক লোকেশন এবং টাইমিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন কোনো সফল উদ্যোক্তা তাদের ব্যবসায়ের সাফল্যের বিষয়ে কিছু বলতে যান তখনই বলেন, তিনি শুধু সঠিক সময়ে সঠিক জায়গাটায় ছিলেন। হয়তো এ কথাটা আপনার কাছে অযাচিত মনে হতে পারে, কিন্তু কথাটা কিছুটা হলেও সত্যি।
আপনি চীনের শেনঝেনকেই দেখুন, বিশ্বের মোট মোবাইল উৎপাদনের ৮০ ভাগই উৎপন্ন হয় সেখানে। শুধু তাই না, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্বন্ধীয় বিশ্বের শীর্ষ কিছু টেক প্রতিষ্ঠান সেখানে গড়ে উঠেছে। এমনকি বিশ্বের শীর্ষ টেক জায়ান্ট যেমন; বাইদু, হুওয়াওয়ে, শিয়াওমি, আইফ্লাইটেক, ওপো কিংবা ভিভো সবারই শেনঝেন এ অফিস রয়েছে। এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে শেনঝেন যেনো রীতিমতো আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
আমেরিকার সিলিকন ভ্যালিও এমন একটি উদ্যোক্তা প্রবন জায়গা। গুগল ফেসবুক এর মত যত বড় বড় কোম্পানি আছে তাদের অধিকাংশই সিলিকন ভ্যালিতে। এবং ভবিষ্যতেও যারা অ্যাপেল কিংবা ফেসবুক হবার মতো চিন্তাভাবনা রাখে তাদের চিন্তাধারা থাকে সিলিকন ভ্যালিতে। জায়গাগুলো ঠিক এভাবেই তৈরি হয়েছে। তো এটা তো পরিষ্কার, সঠিক স্থান একটি বিশাল বড় ফ্যাক্টর।
এবার সঠিক সময় এর ব্যাপারে কি কথা বলা যায়! হ্যা, সবকিছু সঠিক একটা সময় থাকে। এমনকি একটি অসাধারন আইডিয়াও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে শুধুমাত্র যদি টাইমিংটা ঠিক না থাকে।
আমরা অনেকেই হয়ত জানিনা Yahoo গুগোলের চেয়েও আগে এসেছিলো। তারা ঠিক একই সার্ভিস দিতো যা গুগোল দিয়ে থাকে, কিন্তু Yahoo যে সময়টায় (১৯৯৪) সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে মার্কেটে এসেছিলো তখন ইন্টারনেট সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানতো, আর কম্পিউটার ব্যবহার করা ছিলো তখনকার সময়ের জন্য রাজকীয় ব্যাপারের মতোই।
প্রায় একই আইডিয়া নিয়ে যখন গুগোল ১৯৯৮ সালে বাজারে আসলো ততদিনে উন্নত দেশগুলোর মানুষ ইন্টারনেট সম্পর্কে জানা শুরু করেছে। দুটো কোম্পানির বর্তমান অবস্থা দেখেই হয়ত বুঝতে পারছেন সঠিক সময়ের গুরুত্ব কতটুকু।
শুধু জ্ঞান নয়, সাফল্যকে আকর্ষণ করে ব্যাকগ্রাউন্ডও
আপনি কে এবং কোথা থেকে এসেছেন (পারিবারিক স্ট্যাটাস, একাডেমিক কুয়ালিফিকেশন) এই জিনিসগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোয় সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিয়ে যায়। যদি আপনি দেশের কোনো নামকরা কোনো ইউনিভার্সিটি থেকে আসেন, চাকরি কিংবা ব্যবসায় দুটো ক্ষেত্রেই ব্যাপক সুবিধা পাবেন নিশ্চিত করেই বলা যায়। এছাড়াও এমন এলিট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়লে আপনার যাদের সাথে পরিচয় হবে, তারা পরবর্তীতে আপনার আপনার সফলতার পেছনে অনেক বড় অবদান রাখতে পারে।
একটু ভেবে দেখুন এই ইউনিভার্সিটিগুলোয় মূলত খুব মেধাবী শিক্ষার্থীরাই পড়তে আসতে পারে, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায় এসকল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঝারি মানের শিক্ষার্থীরাও অনেক ক্ষেত্রে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেরাদের হার মানায়। অনেক সাংগঠনিক বিষয়েও এমন লেভেলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা অনেক এগিয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো তাদের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা দিয়ে যায়। এমন সফল ব্যক্তি বা বন্ধুদের সাথে যদি যোগাযোগ থাকে তবে আপনাকে সফল উদ্যোক্তা হতে তারা অনেকখানি সহযোগীতা করতে পারে। আবার ব্যবসায় করার মতো কোনো প্রতিভাবান বন্ধুর সাথেও দেখা হয়ে যেতে পারে আপনার ক্যাম্পাসেই।
এমনটাই হয়েছিলো বিল হাওলেট ও ডেভিড প্যাকার্ড এর ক্ষেত্রে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ক্যাম্পাসে এই দুজনের একে অপরের সাথে পরিচয় হয়। এবং পরে এই দুইজন মিলে হাওলেট প্যাকার্ড অর্থ্যাৎ এইচপি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
এবার এই পরিস্থিতিটা একবার চিন্তা করুন আপনি একটি লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, পাশ থেকে একজন সেলিব্রিটি আসলো আর তাকে কোনো লাইন না দিয়েই সরাসরি ঢুকতে দেয়া হলো। এটাই স্ট্যাটাসের পাওয়ার। যেটা শুধু লাইনে না অনেক সময় লাইফেও অনেক দিক থেকে আগে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। একইভাবে যদি আপনার সিভি তে এমন কোনো এলিট ইউনিভার্সিটির নাম থাকে তবে কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও আপনি আনফেয়ার এডভান্টেজ পেয়ে যেতে পারেন।
এবার সঠিক লোকদের কাছ থেকে সহযোগীতা পাবার জন্য আপনাকেও যে অত্যন্ত ধনী পরিবারের সন্তান হতে হবে, কিংবা উচ্চ মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে তেমনটা নয়। স্ট্রং নেটওয়ার্ক অফ কানেকশন তৈরি করেও তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা পেতে পারেন যা সফল উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করবে। তবে খেয়াল রাখবেন এটা যেনো জেনুইন সম্পর্ক হয়। আর যেমনটা আপনি তাদের কাছ থেকে সাহায্য নিচ্ছেন, তেমনই সুযোগ পেলে আপনারও উচিৎ তাদের সাহায্য করা। কারন বন্ধুত্ব বা সুসম্পর্ক দিনশেষে আপনার এমনভাবে সাহায্য করবে, যা আপনার জন্য অপ্রত্যাশিতই বটে।
যেমনটা দ্যা গডফাদার ডন করেলিওন বলেছিলেন, “Friendship is everything. Friendship is more than talent. It is more than the government. It is almost the equal of family”
দ্যা আনফেয়ার এডভান্টেজ
তো আর দেরি না করে চলুন জেনে নিই উদ্যোক্তা হতে হলে কি করবেন -
URL: https://www.amazon.com/Unfair-Advantage-Startup-Success-Starts/dp/1788163311
Author: Ash Ali and Hasan Kubba
8.5