ডিপ্রেশন অর্থ কি
শুরুতেই ডিপ্রেশন নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। ডিপ্রেশন, শব্দটির সাথে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। জীবনের কোনো না কোনো সময় সবাই ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদের মধ্য দিয়ে পার করেছি। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বেড়িয়েছি।
কারও চাকরী না পাওয়ার ডিপ্রেশন, কারও বৈবাহিক জীবনে ডিপ্রেশন, উপযুক্ত জীবন সঙ্গী না পাওয়ার ডিপ্রেশন, কাজের চাপ কিংবা পিছিয়ে পড়ার ভয়, আত্মবিশ্বাসের অভাবে আসা হতাশা থেকে ডিপ্রেশন। জীবনে যেকোন সময়, যে কোনও কারণে ঘিরে ধরতে পারে ডিপ্রেশন। এমনকি মাত্রা ছাড়িয়ে ডিপ্রেশন পৌঁছাতে পারে চরম পর্যায়ে। তো ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় কি আমরা আদৌ জানি, কিংবা জানলেও কি মেনে চলি?
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
দীর্ঘদিন ধরে ডিপ্রশনের ফলে অনেক সময় মানুষ বেছে নেয় আত্মহত্যার মতো অবাঞ্ছিত রাস্তা। চিকিৎসা কিংবা ওষুধ কোনটাই চিরতরে আপনাকে মুক্তি দিবে না ডিপ্রেশন থেকে। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য নিজেকে নিজে সাহায্য করা করতে হবে, অনথ্যয় ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি কখনই সম্ভব নয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে কিছু উপায়ে কাটতে পারে ডিপ্রেশন। তেমনই একটি কার্যকরী উপায় বই পড়া।
‘কাউন্সিল অফ অ্যাডাল্ট এডুকেশন’-এর তথ্য অনুযায়ী, “ছয় মিনিটের নীরব পড়ার ফলে অবসাদের মাত্রা ৮ শতাংশ কমে যায়।”
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে বই কিভাবে সাহায্য করে তা নিয়েই ‘ অব্যয় ‘ এর আজকের আয়োজন—
মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে বই
প্রতিদিনের রুটিং-এ কিছু সময় বই পড়ার জন্য রাখা উচিত। আপনার প্রতিদিনের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের বাইরেও বইয়ের যেকোন একটি অধ্যায় পড়ুন। ফলস্বরূপ আপনার মস্তিষ্ক কিছু সময়ের জন্য রিফ্রেশ হবে। একটি বইয়ে যখন চিত্রায়িত করা হচ্ছে, ” চারিদিক মানুষশূন্য, সূর্যটা এখনও উঁকি দিচ্ছে পাহাড়ের পিছনে, পাখিরা কিচিরমিচির করে জানান দিচ্ছে সকাল হয়েছে, হালকা বাতাস সুরসুরি দিচ্ছে গাছের পাতায়” , মস্তিষ্কে তখন চিত্রগুলো দৃশ্যয়িত হবে। আপনি অনুভব করবেন দৃশ্যটির পরিবেশ।
আপনার মস্তিষ্ক তখন শান্তিপূর্ণ প্রকৃতি অনুভব করবে। অর্থাৎ যখন একটি বই পড়া হয়, মস্তিষ্ক নতুন করে ভাবার সুযোগ পাই, শেখার সুযোগ পাই। ফলস্বরূপ আপনি মানসিকভাবে শান্তি অনুভব করেন। একটা রিফ্রেসের পর কঠিন কাজগুলোতে নতুন উদ্যোমে হাত দিতে পারেন।
যেই বই পড়ছেন তা থেকে অনুপ্রেরণাও অর্জন করতে পারেন । বইয়ের চরিত্রগুলো আপনাকে আরও পরিপূর্ণ করে তুলবে। এছাড়াও আপনি প্রচুর নতুন আইডিয়াও পাচ্ছেন । সবমিলিয়ে আপনার মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে বই।
কিছু একটা সম্পূর্ণ করার অনূভুতি
কিছু একটা সম্পূর্ণ করার অনুভূতি, শুনতে হয়তো অদ্ভুত মত শোনাতে পারে। ডিপ্রেশনের কারণে আপনি যখন কোনো কাজে ঠিকঠাক মন বসাতে পারেন না, কাজটি করার আগ্রহ ফেলেন কিন্তু আপনার হাতে অনেক কাজ, আপনি মনোনিবেশ করতে পারছেন। তখন বই আপনার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিতে পারে।
সাইকোলজিটুডে.কমের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে,’যে একটি উপন্যাস মস্তিষ্কের সংযোগ বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।’
যখন পড়ার জন্য সময় নেয়া হয় তখন কেবল উপভোগ করা হয় না, দীর্ঘমেয়াদে নিজেকে তৈরিও করা হয়। অন্তত আপনার স্মৃতিশক্তি উন্নত হচ্ছে এবং শব্দভাণ্ডার তৈরি হচ্ছে। এমনকি যত বেশি পড়বেন তত বেশি উৎপাদনশীল হবেন। আর যখন একটা বই শেষ করছেন, তখনও বইটি উপভোগ করছেন। বইটির রেশ আপনার মধ্যে থেকে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা কিছু একটা শেষ করেছেন, এই অনুভূতিটি আপনার মধ্যে আসছে। অর্থাৎ আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন।
মনের মধ্যে জ্বলেপুড়ে যাওয়া থেকে মুক্তি
এমন অনেক সময় যায়, বিভিন্ন কারণে আপনি দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যান। দুশ্চিন্তার কারণে আপনার মনের মধ্যে জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে, পৃথিবীর কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। এমন পরিস্থিতিতে একটা বই হতে পারে মানসিক শান্তির পরম ঔষধ।
যখন একটা বই পড়ছেন, একটি নতুন জগতে প্রবেশ করছেন। এক সেকেন্ডের জন্য আপনার মনের বাইরে পা রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। একটি বই পড়া, আপনাকে বইয়ের চরিত্রগুলোর সাথে এবং চরিত্রগুলোর অনুভূতি বা পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করছে তার সাথে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দিচ্ছে।সেটা নিয়ে ভাবছেন, উপভোগ করছেন। অর্থাৎ আপনার মস্তিষ্ক শান্তি লাভ করছে। আপনি দুশ্চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছেন। নতুন করে চিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং সমস্যার সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন।