তাং রাজবংশঃ চীনের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ (পর্ব-২)

tang mistry - Obboy Media

তাং রাজবংশের কবিরা

কবিতার প্রসারে তাং রাজবংশের অবদান স্মরণীয়। যার আংশিক কৃতিত্ব জুয়ানজংয়ের কবিদের জন্য একটি একাডেমি তৈরি করা। যার ফলে সেযুগের ২ হাজারেরও বেশি কবির রচিত ৪৮,৯০০ টি কবিতা সংরক্ষণ সম্ভব হয়েছিলো।

সেসময়ের কবিদের মধ্যে অন্যতম লি বাই। তিনি ৭০১ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং খুব অল্প বয়সেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।লি বাই তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার কবিতায় প্রকৃতি, বন্ধুত্ব এবং অ্যালকোহল গুরুত্ব পেয়েছে।

বাই জুই, ৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একটি নতুন ধারায় কবিতার সূচনা করেছিলেন যা কৃষকরা বোঝার জন্য লেখা হয়েছিল। তার কবিতায় রাজনৈতিক সমস্যা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রাধন্য পেতো। বাই জুই আজীবন সরকারী কর্মচারি ছিলেন এবং ৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান।

ওয়াং ওয়েই, ৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজদরবারে দায়িত্ব পালন করেন। তবে তিনি বৌদ্ধ বিহার থেকে তাঁর বেশিরভাগ বিখ্যাত কবিতা লিখেছিলেন।

লি শ্যাংজিনের তাং রাজবংশের শেষ সময়ের কবি, ৮১৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। বর্জ্র চক্ষু কবিতার জন্য বিখ্যাত। তার কবিতা রাজনৈতিক বিদ্রূপের পাশাপাশি যৌনতাকে উৎসাহিত করতো । তার জনপ্রিয়তা মূলত মৃত্যুর পরে এসেছিল।

তাং রাজবংশের মুদ্রণ

উডব্লক মুদ্রণে তাং যুগের ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটে। নবম শতাব্দীতে ক্যালেন্ডার, শিশুদের বই, ম্যানুয়াল, কালিওগ্রাফি, অভিধানসহ আরও অনেককিছুর সাধারণ ব্যবহার পাওয়া যায়। বাণিজ্যিক বইগুলি প্রায় ৭৬২ খ্রিস্টাব্দে ছাপা শুরু হয়। ৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে অনুমোদনহীন ক্যালেন্ডার বিতরণের কারণে প্রাইভেট প্রিন্টিংয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল

বৌদ্ধধর্ম

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পাঠ্যপুস্তক তৈরির সুযোগ দিয়ে বৌদ্ধধর্মকে সাধারণ চীনা জীবনের নিয়মিত অংশে পরিণত করার জন্য উডব্লক প্রিন্টিংয়ের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। মঠগুলি সম্রাজ্ঞী উ এর অধীনে ক্ষমতা অর্জন করে , যদিও জুয়ানজং এটিকে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

মঠগুলি শিশুদের স্কুল, যাত্রীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা এবং সমাবেশ এবং পার্টির জন্য জায়গা সহ জীবনের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হতো। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বৌদ্ধ গল্পগুলো জনপ্রিয় চীনা সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তৎপর ছিলেন, যার ফলে বৌদ্ধ উৎসবগুলোতে সাধারণ জনগণ অংশ নিতে শুরু করে।

বৌদ্ধ ধর্মের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সম্পর্কে অবশ্য কিছুটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। ৮৪১ খ্রিস্টাব্দে রাজদরবার বৌদ্ধধর্মসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের নির্দেশ দেয়। প্রায় ৫০,০০০ বিহার ও চ্যাপেল ধ্বংস করা হয়েছিল, দেড় লক্ষ দাসকে আটক করা হয়েছিল এবং ২,০০,০০০ সন্ন্যাসী সামাজিক জীবনে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল। আদেশগুলি ৮৪৫ খ্রিস্টব্দে বাতিল করা হয়।

তাং রাজবংশের পতন

তাং রাজবংশ ৭৬৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে দূর্বল হতে শুরু করে। বিশেষ করে লুশান বিদ্রোহের পর প্রজাদের সাথে রাজবংশের দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। ৮২০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে প্রাসাদের ষড়যন্ত্র বেড়ে যায়। ফলে একের পর এক সম্রাটকে হত্যার পরিকল্পনা হতে থাকে। ৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট ওয়েনজং তাঁর চ্যান্সেলর এবং জেনারেলের সাথে একটি পরিকল্পনা করেন যাতে ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটে। তাদের পরিকল্পনা, যা পরে “দ্য সুইট ডিউ ইন্সিডেন্ট” নামে পরিচিত, এক হাজার সরকারী কর্মকর্তাকে হত্যার পাশাপাশি তিন শীর্ষ মন্ত্রী এবং তাদের পরিবারকে জনসমুক্ষে ফাঁসি দেয়।

৮৬০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে গ্রামাঞ্চলে বিশৃঙ্খলা, গ্যাং এবং ছোট ডাকাতদলগুলোর বণিকদের উপর হামলা , শহরে আক্রমণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে সম্রাট ইজং-এর শাসনামলে, অন্যায় চাপ সৃষ্টি প্রজাদের মধ্যে ক্ষেভ তৈরি করে। এসময় খরার ফলে সৃষ্টি হওয়া দূর্ভিক্ষের সময় তিনি উপপত্নীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ৮৭৪-৮৮৪ সাল পর্যন্ত চলা বিদ্রোহ শেষ ধাক্কাটি করে। এর বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন হুয়াং চাও নামের একজন বিদ্রোহী নেতা। এতে ১ লক্ষ জীবনহানী ঘটে এবং হুয়াং চাও তার সেনাবাহিনী নিয়ে রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণ নেন। তাং রাজবংশের কবিতার স্বর্ণযুগের বিপরীতে হুয়াং চাও তাঁর শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে অবমাননাকর কবিতা লেখার দায়ে ৩০০০ কবির মৃত্যুর আদেশ দিয়েছিলেন।৯০৭ খ্রিস্টাব্দে, হুয়াং চাওর প্রাক্তন অনুসারী ঝু ওয়েন নিজেকে সম্রাট তাইজু নামগ্রহণ করে নিজেকে লিয়াং রাজবংশের প্রথম সম্রাট ঘোষণা করেন। এরমধ্য দিয়ে তাং রাজবংশ বিলুপ্ত হয়ে যায়