দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশন এর মূল উপজীব্য:
১৯৪৭ সাল, এক রাতে কোনো বিলাসবহুল বাড়ির সামনে শহরের স্টেট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টকে দেখা যায় তার গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে কিছুক্ষণ পর পর একটি কাচের বোতলে করে মদ্যপান করতে, চিন্তিত অভিব্যক্তি বোঝার সাথে সাথেই তার পিস্তল লোড করে গাড়ি থেকে নেমে ঐ বাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। এরই মধ্যে সিনেমায় দেখা যায় ঐ বাড়ির ভেতর একজন পুরুষ ও নারীকে পরকীয়ার সম্পর্কে জড়াতে। মূলত ঐ ব্যাংকার তাদের উদ্দেশ্যেই পিস্তল নিয়ে এগিয়ে যায় বলেই ধারণা করছিলেন দর্শকরা। আর এর সাথে সাথেই এক জোড়া গুলির আওয়াজ!
পরের দৃশ্যপটে ঐ ব্যাংকার আদালতে আসামীর কাঠগড়ায় দাড়ানো। তার বিরুদ্ধে মামলা চালাচ্ছেন এক রাষ্ট্রীয় উকিল। তার বরাতেই জানা যায় পরকীয়ার সম্পর্কে জড়ানো ঐ মহিলাই ছিলেন উক্ত ব্যাংকারের স্ত্রী।
এদিকে ব্যাংকার স্বাভাবিকভাবেই দাঁড়িয়ে আছেন কাঠগড়ায়। তবে তার দাবী তিনি এই দুটো খুনের সাথে জড়িত নন। তবে স্বীকার করে নেন যে খুনের সময় সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তবে হত্যার সাথে জড়িত না থাকার কোনো শক্ত প্রমাণ না থাকায় বিচারক তাকে যাবজ্জীবন জেলে প্রেরণ করেন।
দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশন সিনেমার এই ব্যাংকারের নাম এন্ড্রিউ ডুফ্রিন (এন্ডি)।
১৯৪৯ সালে এন্ডি ডুফ্রিনের ঠিকানা হয় “শশাঙ্ক প্রিজন” বা “” সেখানে এক নাটকীয়তার মাঝে পরিচয় হয় এলিস রেডিং (রেড) এর সাথে। পুরো সিনেমায় তাদের বন্ধুত্ব এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
রেড এই কারাগারে আছে প্রায় ২০ বছর, এ সময়ে তিনি বেশ মানিয়ে নিয়েছেন এই পরিবেশের সাথে।
এই কারাগারে তার সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত ক্ষমতা হলো তিনি কয়েদিদের চাহিদানুযায়ী যেকোনো কিছু এনে দিতে পারেন, তবে এজন্য তাকে ২০% পারিশ্রমিকও দিতে হয়। এমনকি তার বন্ধু এন্ডি’ও তার মাধ্যমে অনেক কিছুই আনায় যার সবগুলোই ছিলো শখের বশে।
সিনেমায় সবকিছুকে ঠান্ডা মাথায় মানিয়ে চলাটা ছিলো এন্ডি ডুফ্রিনের বৈশিষ্ট্য। রেড এর মতে, সে (এন্ডি) যেনো একজন সুখী ব্যক্তি যে কি না অদৃশ্য স্যুট পড়ে পার্কে জেলের ভেতর উদ্যানে হাটতো।
এন্ডি ডুফ্রিন এর জেলজীবন
এর মধ্যেও আছে নানান চড়াই উৎরাই। ডুফ্রিনের বছরের পর বছর যাচ্ছিলো এক অদ্ভুত তাড়নায়। উক্ত জেলখানায় বগস নামে এক সমকামী ছিলো, সাথে ছিলো তার কিছু বিপথগামী বন্ধু। সুদর্শন এন্ডি ডুফ্রিনকে তারা প্রথম থেকেই লক্ষবস্তুতে পরিণত করে, তবে এন্ডি তাদের ডাকে সারা দেয়না, নানান প্রতিকূলতার মাঝেও কোনো না কোনো উপায়ে বেঁচে যান।
তবে বগস (সিস্টার্স) এর হাত থেকে স্থায়ীভাবে বেঁচে যাওয়াটাও ছিলো বেশ ড্রামাটিক। যা আপনি দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশন সিনেমাটি দেখলে বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারবেন। এর মাঝে শিক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে আপনার যদি প্রতিভা থাকে তা অন্যের জীবনকে সহজ করার চেষ্টা করুন। আপনার শত্রুদের তারাই দেখে নিবে।
এরই মাঝে এক বৃদ্ধ কয়েদির মুক্তির ঘোষণা আসে, সে কয়েদি প্রায় পুরো জীবনটাই পার করেছে এই কারাগারে। এটিই ছিলো তার একমাত্র পরিবার। মুক্তির সংবাদ তাকে আনন্দিত করতে পারেনি, বরং দিয়েছে বেদনা। তার জেল পরবর্তী জীবনের ক্ষুদ্র অংশটিও নাড়া দিবে আপনার মনে।
দ্যা শশাঙ্ক প্রিজনের নির্মমতা
চলচ্চিত্রটিতে ফুটে উঠেছে জেলখানার অন্ধকার জগতের কিছু অপ্রকাশিত সত্য, এই নিকষ কালো অন্ধকারে কত কিছু আমাদের অগোচরে থেকে যায় তা কাচের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে আপনার কাছে।
একজন কয়েদি হয়েও কারাগারের পরিচালক ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মীর সাথে বিশেষ এক কারণে সুসম্পর্ক হয়। একে অপরকে বিভিন্ন সময়ে সুবিধা দিতে থাকেন। তবে কারাগারের পরিচালক যে তাকে নিজের স্বার্থেই ব্যবহার করেছিলেন তা সিনেমার কিছু বিশেষ একটি মুহুর্তে বেশ ভালোভাবেই বোঝা যায়।
তবুও এন্ডি ডুফ্রিনের জেলজীবন ছিলো এক চিলতে গরম চুলো। এন্ডি ডুফ্রিন একসময় বুঝতে পারলেন যে এভাবে বেঁচে থাকা যায়না। পুরো সিনেমায় একাধিকবার তাকে বলতে শোনা গেছে “Get Busy Living or Get Busy Dying” অর্থাৎ জীবন মৃত্যুর যেকোনো একটি রাস্তা তাকে বেছে নিতেই হবে। অবশেষে ১৭ বছর পর তিনি আর শান্ত থাকতে পারলেন না। বাধ্য হলেন সিদ্ধান্ত নিতে।
দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশন এ এন্ডি ডুফ্রিনের মূল যাত্রা
বিকেলে উদ্যানে দেখা হয় প্রিয় বন্ধু রেড’এর সাথে সেখানে এন্ডি ডুফ্রিনকে বেশ মনমরা ও চিন্তিত দেখা যায়। গাম্ভীর্যপূর্ণ কথাবার্তার এক পর্যায়ে রেডকে তার প্রয়াত স্ত্রীর সাথে প্রথম সাক্ষাতের স্থানের ব্যাপারে বলে। আর রেডকে কঠোরভাবে অনুরোধ করেন, যদি কখনো সে (রেড) মুক্তি পায় তবে যেনো সেখানে যায়। বিশাল এক ওক গাছের গোড়ায় এক বিশেষ পাথররের নিচে একটি বক্স রাখা আছে। সেটা যেনো খুলে দেখে। এন্ডির মুখে এমন অদ্ভুত আবেদন শুনে রেড চিন্তিত হয়ে পড়ে। কিছু একটা আন্দাজ করে ফেলে। বুঝতে পারে, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
উত্তেজনা আরো বেড়ে যায় যখন রাতে ডুফ্রিনের বন্ধুরা একসাথে বসে খাবার খাচ্ছিলেন। ডুফ্রিনের অন্যতম বন্ধু হ্যাডলি বলে ওঠে এন্ডি তাকে দিয়ে প্রায় ৬ ফুট লম্বা একটি শক্তপোক্ত দড়ি আনিয়েছে।
কি হয় সে বৃষ্টিস্নাত রাতে? আর এন্ডি ঐ ওক গাছের নিচেই বা কি রেখেছিলো? সিনেমার শেষের এই আধ ঘন্টা মুভিপ্রেমীদের জন্য কেনই বা দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশন কে প্রিয় চলচ্চিত্রের আসনে বসিয়েছে? তা জানা যাবে ১৪২ মিনিটের এই মুভিটি দেখলে।