ছবি দেখে যদি ভেবে থাকেন কোনো চিত্রশিল্পীর নিপুণহাতের শিল্পকর্ম, তাহলে ভুল ভাবছেন। এটা মোটেই কোনো চিত্রকর্ম নয় বরং এর উপস্থিতি আমাদের পৃথিবীতেই । প্রকৃতির অন্যান্য বিস্ময় সৌন্দর্যের সাথে পার্থক্য হলে এর উৎপত্তি কৃত্রিমভাবে। এবার হয়তো ভাবতে পারেন তাহলে ভিনগ্রহের কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর তৈরি এই স্বর্গীয় সৌন্দর্য! তাহলে অতীব দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আপনার ধারণা পুরোপুরি ভুল। রহস্যময় সৌন্দর্যের সৃষ্টি একটি দূর্ঘটনা থেকে।
ছবির রহস্যময় এই সৌন্দর্যটি একটি গিজার। এর নাম ফ্লাই গিজার। এটি ফ্লাই রেঞ্জাট গিজার নামেও পরিচিত। গিজার হলো পানির একধরণের উষ্ণ প্রস্রবণ। মূলত ভূগর্ভস্থ উচ্চমাত্রা ও চাপে ভূত্বকের অপেক্ষাকৃত পাতলাজায়গা থেকে পানির উদগীরণ ঘটে। যা অনেকটা ফোয়ারার মতো দেখায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা মরুভূমিতে অবস্থিত ফ্লাই গিজার। যুক্তরাষ্ট্রের রুট ৩৪ এর পাশেই এটির অবস্থান। রুট ৩৪ থেকে সহজেই উপভোগ করা যায় এর সৌন্দর্য। এটি নেভাডা মরুভূমির অন্যতম আকর্ষণ। এটি বাতাসে প্রায় ৫ ফুট উচ্চতায় ছুড়ে দেয় গরম পানি। এই পানির তাপমাত্রা ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৯৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
মরুভূমির ঐ অংশে কৃষিকাজের জন্য কুয়া খোঁড়া হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত পানির তাপমাত্রা প্রায় ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পাওয়া যায়। বাধ্য হয়ে সেসময় কুয়াটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে খনিজ অনুসন্ধানে প্রথম স্থানের ১০০ গজ দূরে পুনরায় খনন করে একটি ভূত্বাত্তিক সংস্থা। তারাও পানির তাপমাত্রা একই অবস্থায় পায়৷ ফলে পুনরায় এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর কিছুুদিন পর থেকেই গরম পানি ফুয়ারা আকারে বের হয়ে আসতে থাকে। ধারণ করা হয় কোম্পানিটি ঠিকমত খননকার্যের জায়গা বন্ধ না করায় এঅবস্থার সৃষ্টি হয়। এরমধ্যদিয়েই জন্ম নেয় ফ্লাই রেঞ্জ গিজার।
পানির সাথে উঠতে থাকে বিভিন্ন ধরণের খনিজ পদার্থ। যা এর গোঁড়ায় জমা হতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে এটি খনিজের টিলায় রূপান্তর হয়। তবে একাধিক মুখ থেকে পানি বের হওয়ায় উচ্চতায় খুব বেশি বড় হতে পারেনি ফ্লাই গিজার। এর উচ্চতা ও প্রশস্ততা উভয়ই প্রায় ১২ ফুট বা ৩.৭ মিটার করে। এর রঙধুনর সাত রঙের রহস্য হলো খনিজ ও শৈবাল । গিজার থেকে আসা পানির মধ্যে থার্মোফিলিক শৈবাল রয়েছে, যা আর্দ্র, গরম পরিবেশে পুষ্পিত হয়ে সবুজ ও লাল রঙ তৈরি করেছে । আর উঠে আসা খনিজগুলো অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে বাকি রঙগুলো। যা সব মিলিয়ে রংধনুর রঙ সৃষ্টি করেছে।
গিজারের পানি এসে এর আশেপাশে প্রায় ৪০টি ডোবা তৈরি করেছে। ফলে আশেপাশে কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গরম পানি ফসলের সেচের জন্য ব্যবহার করা যায় না, তাই ডোবাগুলোও পরিত্যক্ত। ডেবাগুলোতে অনেক মাছের দেখা মেলে। ফ্লাই গিজারের আশেপাশে বসবাস বিভিন্ন জাতের পাখির। এখনও পর্যন্ত ৯০ টিরও বেশি অতিথি পাখির খোঁজ পাওয়া গেছে এ অঞ্চলে।
ফ্লাই গিজার, বার্নিং ম্যান প্রকল্প
বার্নিং ম্যান প্রকল্পের সহায়তায় এটি চাইলে যেকোনো দিন ঘুরে আসতে পারেন । তবে কিছুদিন আগেও এটি চাইলেই পরিদর্শনের সুযোগ ছিলো না। কারণ এটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিলো। দীর্ঘ ২০ বছরের প্রচেষ্টায় বার্নিং ম্যান প্রকল্প এটি কিনতে সক্ষম হয়। প্রকল্পটি ২০১৬ সালে ফ্লাই রেঞ্জ এলাকার ৩৮০০ একর জায়গা কিনতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে ফ্লাই গিজার জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বার্নিং ম্যান প্রজেক্ট অলাভজনক সংস্থা। ফ্লাই গিজার পরিদর্শনে যাওয়া দর্শনার্থীদের থেকে তারা অনুদান সংগ্রহ করে। যা প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত হয়।
বার্নিং ম্যান প্রকল্প এ অঞ্চলে নিয়মিত অন্বেষণ চালাচ্ছে ও গবেষণা করছে। ফ্লাই রেঞ্চের ফেলোদের বিজ্ঞানের প্রয়োজনে আবিষ্কার, শিল্প এবং পুর্নবীকরণযোগ্য প্রকল্পগুলোর জন্য এই প্রসারিত জমিটিকে একটি ইনকিউবেটারে পরিণত করার লক্ষ্য রয়েছে।