খলিশা ফুলের মধু : সুন্দরবনের খলিশা ফুলের মধুর বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা

খলিশা ফুলের মধু
খলিশা ফুলের মধু

এই নিবন্ধে আমরা খলিশা ফুলের মধু সম্পর্কে আলোচনা করব এবং জানব কিভাবে এটি পুরোপুরি নিজস্ব উৎস থেকে উৎপাদিত হয়। এছাড়াও আমরা জানব কিভাবে এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং এর পার্শ্ব প্রভাব কি।

খলিশা ফুল একটি সুন্দর ফুল যা সাধারণত বৈজ্ঞানিক নাম হিমেরীকে পেতে। এই ফুলটি বিভিন্ন দেশের প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে পাওয়া যায়। খলিশা ফুল থেকে তৈরি মধু ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর ব্যবহার স্বাস্থ্যকর উপকারিতা বিশিষ্ট হয়।

‘মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই, ঐ ফুল ফুটে বনে, যাই মধু আহরণে, দাঁড়াবার সময়তো নাই…’।
কংক্রিটের এই শহরে মৌমাছির দেখা মেলা ভার হলেও গ্রামীণ জীবনে এখনও নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের বিখ্যাত ছড়া ‘কাজের লোক’-এর মতো মৌমাছিরা ফুলে-ফুলে ঘুরে-ঘুরে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করে ।

নগরীর ব্যস্ত আর জানজটে জরাজীর্ণ জীবনে মৌমাছি মধু না খুঁজলেও খাঁটি মধু কম-বেশি আমরা সবাই খুঁজে ফিরি। বাজারে বিভিন্ন ধরণের মধু পাওয়া গেলও সুন্দরবনের মধুর আবেদনই সবসময় বেশি।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে বলা হয় মধুর স্বর্গরাজ্য। মানের দিক থেকে সুন্দরবনে তিন প্রকারের মধু সংগ্রহ করা হয়, যারমধ্যে খলিশা ফুলের পদ্ম মধু, গরান ও গর্জন ফুলের বালিহার মধু এবং মৌসুমের একেবারেই শেষে আসে কেওড়া ও গেওয়া ফুলের মধু।

সাধারণত সুন্দরবনে যেসব গাছে ফুল ফুটে তারমধ্যে খলিশা, গড়ান, কেওড়া, বাইন গাছ উল্লেখযোগ্য । এছাড়াও আছে তরার কিরপি, ঢালচাকা, পশুর, ধুন্দল, গুঁড়ে, কাঁকড়া, কালোলতা, হরগোজা, গোল, জানা, বনলেবু, কেয়া, বাঁকঝাঁকা, হরিণআড়ু,লাটমে, সুন্দরী, ধানি, বাউলে লতা, কেওড়া, বাইন, গেওয়াসহ বহুরঙ ও ঢঙের ফুল। তবে সবচেয়ে দামী ফুল ধরা হয় খলিশা ফুলকে । কেননা খলিশা ফুল থেকে উৎপন্ন মধুর স্বাদ ও দাম অন্যান্য ফুল থেকে উৎপাদিত মধু থেকে বেশি।

খলিশা ফুলের মধুকে বলা হয় সুন্দরবনের আশীর্বাদ। সুন্দরবন ছাড়া সারাদেশে অন্য কোথাও খলিশা ফুলের মধু আহরণ করা যায় না। সাদা রঙের ফুল খলিসা ফুটতে শুরু করে বাংলা মাস ফাল্গুন থেকে। খলিশা ফুলের গাছকে বলা হয় ‘হানিপ্লান্ট’। খলিশা গাছ সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বেশি পাওয়া যায়।

সুন্দরবনে চৈত্র মাসে প্রথম যে মধুটা উৎপন্ন হয় তা হল খলিশা গাছের ফুলের হালকা লাল পদ্মা মধু । সাধারণত সুন্দরবনের ফুল ফোটা শুরু হয় লতা জাতীয় এক প্রকার গাছের ফুল দিয়ে। এরপর খলিশা ফুলে ছেয়ে যায় সুন্দরবন। মৌমাছি খলিসা ফুলের নির্জাস সংগ্রহ করে । ঠিক ওই সময়ে যে মধু মৌয়ালরা সংগ্রহ করে সেটাকেই খলিশার মধু বা পদ্ম মধু বলা হয়।

প্রাকৃতিক নিয়মে সুন্দরবন মূলত পাঁচ ধরণের মধু পাওয়া যায়। এর মধ্যে খলিশা ফুল স্বল্প সময় স্থায়ী হয়ে । মার্চ-এপ্রিলে মাসে খলিশা গাছের সাদা ফুলে ভরে ওঠে সুন্দরবন । এসময় খলিশায় ছেয়ে থাকে বনের চারদিক, অন্য কোন ফুল ফুটেনা এসময় । মৌমাছিরা সেই খলিশা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে গাছে গাছে চাক বাঁধে। সেই ফুলের নির্জাস জমে যে মধু হয় সেটাই খলিশা ফুলের মধু। খলিসা ফুলের মধু সংগ্রহ করা খলিশা ফুল ফুটার সময়, চাকের মধু, প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করার মাধ্যমে। দিনের হিসাব কাজে লাগিয়ে দক্ষ মৌয়ালরা এক চাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন।

খলিসা মধুর স্বাদের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মনিরুজ্জামান খন্দকার বলেন , প্রত্যেক গাছের মধ্যেই বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য থাকে। একারণে মধুর স্বাদের ভিন্নতা থাকে। খলিসা গাছের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যও অন্য গাছ থেকে আলাদা। একারণে খলিসা গাছের মধু সুস্বাদু।

খলিশা ফুলের মধুর গুণাগুণ ও উপকারিতা অন্য মধুর মতই শুধু পার্থক্য এর অতুলনীয় স্বাদ। এছাড়াও পেটের অসুখের জন্যে অত্যন্ত ভালো কাজ করে পদ্ম মধু । বিশেষ করে বাচ্চাদের পেটের অসুখের জন্যে। খুব তরল এবং অত্যন্ত সুস্বাদু আর দারুণ ঘ্রাণযুক্ত খলিশা ফুলের মধু পদ্ম মধু।

/এসএ