‘খাই খাই করো কেনো, এসে বসো আহারে–
খাওয়াবো আজব খাওয়া, ভোজ কয় যাহারে’ সুকুমার রায়ের ‘খাই খাই’ ছড়ার লাইনগুলো আমরা বাঙালীরা কতটা ভোজন রসিক তারই প্রমাণ। তবে যেমন-তেমন রান্না হলে কি আর ভুঁড়িভোজ হয়? প্রচীনকালে মানুষ শুধু আগুনে পুড়িয়ে খাবার খেত।
পরবর্তীতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জাতি থেকে জাতিতে রান্না শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে।বর্তমানে ভালো রান্নার জন্য পৃথিবীতে জুড়ে কত আয়োজন, টিভি জুড়ে আছে রান্নার অনুষ্ঠান, রিয়েলিটি শো, রেসিপির বই, ফুড বগ্ল। এই ভালো রান্নার জন্যই একসময় তৈরি হয় রান্নার স্কুল ।
মধ্যযুগ পর্যন্ত রান্নার পদ্ধতির সেভাবে লিপিবদ্ধ ছিল না। মধ্যযুগের আগে বিভিন্ন কবিতা, ডায়েরি এবং পাণ্ডুলিপিতে এলোমেলোভাবে কিছু রেসিপির ধারণা পাওয়া যায়। প্রথম পূর্ণাঙ্গ রান্নার বইটি প্রকাশিত হয় ১৩৭৯ সালে, ফ্রান্সে। কিং চার্লস ভি -এর মাস্টার ব্যক্তিগত বাবুর্চি টেইলভেন্টের প্রথম বইটির লেখক ছিলেন। এরপর ইংরেজিতে প্রথম প্যাস্ট্রি রেসিপির বই আসে ১৫৪৫ সালে।
এই বইগুলোতে রেসিপিগুলো সম্পর্কে খুবই সামান্য ধারণা ছিলো। যেনো লেখকদের ধারণা ছিলো, তাদের পাঠকরা রান্নার মৌলিক বিষয়ের সাথে পরিচিত, কতক্ষণ বা কোন তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে সে সম্পর্কে কোনও নির্দেশনা ছাড়ায় উপকরণ লিখে “তারপরে এটি রান্না করুন”, এই বাক্যটি দিয়ে শেষ করা হয়েছিলো রেসিপিগুলো।
বিশ্বের প্রথম রান্নার স্কুল
এই দৃশ্যে পরিবর্তন আনেন লন্ডনের প্যাস্ট্রি শেফ এডওয়ার্ড কিড্ডর । ১৬০০ শতাব্দীর শেষের দিকে লন্ডনের প্রথম পাইয়ের (ফার্স্টফুড) দোকানটি খোলেন এডওয়ার্ড কিড্ডর । কিড্ডর দোকানটি লন্ডনের এক সস্তা পাড়ায় হলেও শীঘ্রই শহর জুড়ে তার সুস্বাদু পেস্ট্রি, ভেড়ার মাংস, মজাদার মুরগী, মিষ্টি কাস্টার্ডের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
ফলে অল্প কিছুদিন পর তিনি তার দোকানের নতুন শাখাও খোলেন।পাশাপাশি তিনি ধনী মহিলাদের জন্য পাই তৈরির কৌশল শেখাতে শুরু করেন। সবমিলিয়ে অল্প সময়েই তার রান্নার ক্লাসগুলো জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। ক্লাসগুলোতে জেলি তৈরি থেকে শুরু করে শাকসবজী সংরক্ষণের পর্যন্ত সবই শেখানো হতো।
১৭৩৯ সালে কিড্ডর নিজের রান্নার বই প্রকাশ করেন, যা ‘দ্যা রেসিপি অফ প্যাস্ট্রি অ্যান্ড কুকরি’ নামে পরিচিত। সেসময় তার বয়স প্রায় ৭৩ বছর, তারপরও তিনি তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন, সপ্তাহে ছয় দিন তিনি রান্নার ক্লাস নিতেন । দুর্ভাগ্যক্রমে, বইটি প্রকাশের কিছুদিন পরই কিড্ডর মৃত্যু হয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য কর্মজীবনে অন্তত ৬,০০০ মহিলাকে তিনি রান্না শিখিয়েছিলেন।
কিড্ডর রান্নার ক্লাসগুলো একেবারেই সস্তা ছিল না। কেননা মৃত্যুর আগে যথেষ্ট ধনী হয়ে উঠেছিলেন কিড্ডর। মৃত্যুর পর তার স্ত্রী এবং সন্তানদের জন্য করা উইলে অন্যান্য সম্পত্তির সাথে একটি হীরার আংটি, সোনার ঘড়ি ছাড়াও অনেক ব্যয়বহুল সামগ্রী ছিলো । কিড্ডর লেখা বই ও তার স্কুলের কাছে সারাবিশ্বের রান্নার স্কুল গুলো চিরঋণী।