অ্যামাজাকে : এক কাপ জাপানি ইতিহাস অথবা মিরাকেল পানীয়র আখ্যান

অ্যামাজাকে (প্রতিকী ছবি) - ObboyMedia
অ্যামাজাকে (প্রতিকী ছবি), pexel

জাপনি শব্দ অ্যামাজাকের বাংলা অর্থ “মিষ্টি পানীয়”। অ্যামাজাকে জাপানের বিখ্যাত এবং ঐতিহাসিক একটি পানীয়। হাজারবছরের বেশি সময় ধরে জাপানে জনপ্রিয় পানীয়টির পুষ্টিগুণের জন্য সুপারড্রিংক বলা হয়। স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে উপকারী উপাদান, সহজে হজমযোগ্য ও গ্লুটেনমুক্ত হওয়ায় একে “ড্রিঙ্ক এভেইলেবল ফোর” বা “পানীয়যোগ্য চার” বলা হয়। বর্তমানে অ্যামাজাকের জনপ্রিয়তা জাপানের ইতিহাস ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বেই।

এক কাপ জাপানি ইতিহাস

জাপানের ইতিহাসে অ্যামাজাকে হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে জায়গা করে নিয়েছে। কবে, কোথায়, কিভাবে এটা শুরু হলো তা জানা যায়নি। জাপানের লিখিত ইতিহাসে ৭২০ সাল থেকে এর উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে জাপানের কোফুন শাসনামলে (প্রায় ২৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ) জাপানে খাদ্য গাঁজন এবং সংরক্ষণের কৌশল চালু ছিল।

যেসময়ই এটার উৎপত্তি ঘটুক না কেনো, সত্য হলো এটা হাজার বছর পরেও টিকে আছে। শুধু টিকে থাকায় নয় দিনদিন এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। জাপান ফুড এন্ড ড্রিঙ্ক এক্সিবিউশ (ফুডেক্স) এর তথ্য অনুসারে, ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বিক্রয় অ্যামাজাকে ১৩৪.৮% বেড়েছে। ২০১৯ সালেও এর জনপ্রিয়তা অব্যাহত আছে।

নতুন বছরের প্রাক্কালে মন্দিরগুলিতে অ্যামাজাকে পান করা হয়। জাপানিদের হিনামতসুরি বা পুতুল উৎসবসহ অন্যান্য উৎসবেও এটি বিশেষভাবে পান করা হয়। অনেক জাপানি মানুষ পানীয়টিকে তাদের অতীত এবং বর্তমান জাতীয় সংস্কৃতি উভয়েরই একটি বন্ধন হিসাবে বিবেচনা করেন।

অ্যামাজাকে আসলে কি?

অ্যামাজাকে হলো চাল ও ছত্রাকের ব্যবহারে গাঁজন প্রক্রিয়াই উৎপন্ন, অ্যালকোহলমুক্ত কিন্তু হালকা উত্তেজনা বর্ধক পানীয়। এটি স্বাদে মজাদার এবং মিষ্টি।ঐতিহাসিকভাবে এটি বিশ্বের প্রথম এনার্জি ড্রিংকগুলির মধ্যে একটি, যা বিস্ময়কর পরিমাণে পুষ্টিকর প্লাস গ্লুকোজ পূর্ণ। এটি খুব সহজেই বাড়িতে তৈরি সম্ভব।

সৌন্দর্যের উপাদান হিসাবে ২০-৪০ বছর বয়সী মহিলাদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

অ্যামাজাকে তৈরী প্রণালী

অ্যামাজাকে তৈরি উপদানের মধ্যে রয়েছে চাল, পানি এবং কোজি (একধরণের ছত্রাক, গাঁজন পক্রিয়ায় সহয়তা করে)। চাল সেদ্ধ করে, পানিতে কোজি মিশিয়ে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা রেখে দিয়ে এটি তৈরি করা হয়।

মিরাকেল পানীয়

অ্যালকোহলমুক্ত হলেও এটা হালাকা উত্তেজনা তৈরি করে। এটি স্বাস্থ্যগত উপকার ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য প্রশংসিত। এতে ভিটামিন বি৬, বি৫ এবং ফলিক অ্যাসিড, ফেরুলিক অ্যাসিড, ডায়েটার ফাইবার এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্লুকোজ রয়েছে। যা স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত এবং স্থিতিশীল করতে এবং মেজাজ উন্নত করতে সহায়তা করে। এতে থাকা গ্লুকোজ দেহের শক্তি বৃদ্ধি করে।

এর চিত্তাকর্ষক তালিকার মধ্যে রয়েছে সুন্দর ত্বক এবং স্বাস্থ্যকর চুল , ওজন হ্রাস, ক্লান্তি মুক্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম, নিদ্রা বৃদ্ধি, হজমশক্তি বৃদ্ধিতেও সহয়তা করে। ত্বক, চুল এবং নখের জন্যও এটি উপকারী। জাপানে, এটি স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যের উপাদান হিসাবে ২০-৪০ বছর বয়সী মহিলাদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।