ড্যানিয়েল পেরেজ, একাধারে স্ট্যান্ড-আপ কমিডিয়ান, অভিনেতা এবং লেখক। ড্যানিয়েলের এতসব পরিচয়কে আশ্চর্যপূর্ণ করে তুলেছে তার পা ছাড়া জীবন। হুইলচেয়ারে বসেই তিনি হাসিয়ে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসবাসীকে। পা না থাকলেও চলা থামিয়ে দেননি ড্যানিয়েল পেরেজ। ৩৬ বছর বয়সী ড্যানিয়েলের হুইলচেয়ারে লড়াকু জীবনের সফলতা এখন অনুপ্রেরণা তরুণদের জন্য।
পেরেজের জন্য জীবন সবসময় উপভোগ্য ছিল না। তাকে লড়াই করতে হয়েছে হতাশা ও অক্ষমতার সাথে। ড্যানিয়েল পেরেজ বড় হয়েছেন লস অ্যাঞ্জেলেসে এবং বর্তমানে সেখানেই থাকেন। পেরেজ সান ফ্রান্সিসকো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পর এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা তার জীবনকে বদলে দেয়।
হুইল চেয়ারে জীবন
২০০৪ সাল, পেরেজের তখন ২০ বছর বয়স। সান ফ্রান্সিসকোতে থাকাকালীন একদিন রাস্তা পারাপারের সময় হঠাৎ একটি ট্রলি তাকে ধাক্কা দেয়। এঘটনায় তার দুই পা মারত্মকভাবে জখম হয়। চিকিৎসকরা তার দুই পায়ের হাটুর নিচে থেকে বাদ দিতে বাধ্য হন।
আমি বাস্তবতাকে একপ্রকার অস্বীকার করছিলাম। আমি কেবল আমার বন্ধুদের সাথে যেতে চেয়েছি। আমি কেবল স্বাভাবিক হতে চেয়েছিলাম, পেরেজ বলেন।
প্রথমদিকে, এই অস্বীকৃতিই পেরেজকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছিল।
পেরেজ বলেন, এটি আমাকে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে, গাড়ি চালানো শিখতে অনুপ্রেরণা দেয়। কিন্তু এখানেও বিলম্ব তৈরি হয় কারণ মানুষ আপনার সাথে অন্যরকম আচরণ করবে, যা সবকিছু আরও কঠিন করে তুলে।
প্রোস্টেথিক পরার পর পেরেজকে সেগুলি ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল।
পেরেজ বলেন, এর পরে আমি খুব হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলাম এবং আমার অনেক ওজন বেড়েছে।
যেভাবে শুরু মানুষকে হাসানো
বছর ৬ আগে, তিনি একেবারেই ভিন্ন একটা জায়গায় জীবনের আনন্দ খুঁজে পান, সেটা হলো কমেডি ক্লাব। তার বেস্ট ফ্রেন্ড ও রুমমেট ছিলেন একজন স্ট্যান্ডআপ কৌতুক অভিনেতা। পেরেজ তার বন্ধুর শোতে যাওয়া শুরু করেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন এটাই সেই জায়গা। পেরেজ একটি কমেডি ক্লাসে অংশ নেন এবং তিনি মাইকের সামনে আসেন। হলিউড নামে ছোটো একটি কফিশপে তিনি প্রথম শো’টি করেন।
পেরেজ বলেন, আমি আমার প্রথম শো ছোট্ট হলিউড কফিশপে করেছিলাম, সেখানে থাকা মানুষেরা আমার কমিক শুনে হেসেছিল এবং আমি এটির প্রেমে পড়েছি।
ড্যানিয়েল পেরেজ তার অভিজ্ঞতাগুলোকে তার কৌতুকের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করে। তিনি তার কৌতুকে তার জীবন, পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও ডেটিং নিয়ে হাস্যরস করেন। যখন তিনি তার কৌতুক উপস্থাপন করেন, লোকেরা তাকে কি ভাবেন সে সম্পর্কে চিন্তা করেন না।
পেরেজ বলেন, আমি দুর্ঘটনার বিষয়ে কথা বলি,আমি আমার হতাশার কথা বলি। আমরা সকল মানুষই জটিল , তাই যখন তারা এটি দেখে এবং বুঝতে পারে, এটা দুর্দান্ত।
তিনি বলেন, আমি যখন মঞ্চে যাই, তারা আমার অক্ষমতা নিয়ে ভাবেন কি এটা ভাবি না, আমি কেবল উদ্বিগ্ন থাকি , এই কমেডিটা কি মজার?
দ্য প্রাইস ইজ রাইট
২০১৫ সালে পেরেজ “দ্য প্রাইস ইজ রাইট” এর একটি পর্বে হাজির হওয়ার পরে স্পটলাইটে চলে আসেন। অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে করা ডকুমেন্টারি ব্যাপক সারা ফেলে দেয়। ভিডিওটি মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় নেট দুনিয়ায়। বিভিন্ন নিউজ নেটওয়ার্কে তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তিনি “জিমি কিমেল লাইভ!” শো’এ অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়েছিলেন। সবমিলিয়ে “দ্য প্রাইস ইজ রাইট” শো তাকে একটা ফ্যান বেজ তৈরি করে দেয়।
অনুপ্রেরণার নাম ড্যানিয়েল পেরেজ
পেরেজ বেশ কয়েকটি কমেডি উৎসব ও ভেন্যুতে কৌতুক অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য এসএফ স্কেচফেষ্ট, লাফিং স্কাল কমেডি ফেস্টিভাল এবং ব্রুকলিন কমেডি ফেস্টিভাল। তিনি মারিয়া বামফোর্ড, লরি কিলমার্টিন এবং গাই ব্রানামসহ অনেক জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতার সাথেও কাজ করেছেন।
তিনি তার সহযোগী কমিকস ম্যাডিসন শেপার্ড এবং ড্যানিয়েল র্যাডফোর্ডের সাথে থাই গ্যাপ কমেডি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। তারা লস অ্যাঞ্জেলেসের বিভিন্ন স্থানে লাইভ কমেডি শোতে অংশ নেন।
পেরেজ বলেন, জীবন সবার জন্যই কঠিন হয়। তবে কিছু একটা করার মধ্য দিয়ে মানুষ আনন্দ খুঁজে নেয়….।
তিনি ২০১৮ সালের স্ট্যান্ডআপ এনবিসি সেমিফাইনালিস্ট ছিলেন। এমটিভি’র ডিকোডডের একটি পর্বও হোস্ট করেন তিনি। বাজফিডে তিনি অভিনয় করেছেন ও অ্যানিমেটেড একটি রাক্ষসের চরিত্রেও কণ্ঠ দিয়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস ম্যাগাজিনের “লস অ্যাঞ্জেলেসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ১৩ জন নারী” তালিকাও তার নাম উঠে আসে। রিফাইনারি ২৯, সিএনএন, ফোবর্স, গ্রেট বিগ স্টোরির মত পত্রিকাগুলো তাকে স্টোরি করেছে। নেটফ্লিক্সের জন্যও সিরিজ লিখেছেন তিনি। এখন পেরেজ পুরো লস অ্যাঞ্জেলেসের কমেডি ক্লাবগুলোতে অভিনয় করছেন। ১৬ বছর আগের দুর্ঘটনা ভুলে সে অনেক দূর হেঁটে এসেছে এবং সামনে হাঁটতে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন সবাইকে।