আপনি গতানুগতিক কাজ করছেন তারমধ্যে এমন একটা ভুল করলেন যেটা আপনার জন্য বিপদজনক এবং অঘটন ঘটতে চলেছে। ঠিক তার আগেই শুরু হয়ে গেলো কফিন নিয়ে একদল স্যুট-বুট ও সানগ্লাস পরিহিত ব্যক্তির নাচ।’ এমনই ভিডিও মিমি ঘুড়ে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। বিশেষ করে করোনাজনিত স্থবিরতায় যখন অধিকাংশ দেশ লকডাউনে তখন বিভিন্ন ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তবে ভাইরাল এই মিমি মোটেই কোনো মিউজিক ভিডিও বা কোনো শুটিং-এর অংশ নয়। বাস্তবেই রয়েছে এই কফিন নাচের সংস্কৃতি। হয়তো ভাবছেন, কতধরণের নাচইতো হয়, ক্লাসিকাল, ভারতনাট্যম, তাই বলে কফিন নাচ! শুনতে অবাক লাগছে তাই না? অবাক লাগবে না কেনো! প্রিয়জনের মৃত্যু যে কারও জন্যেই বিষাদময়। মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরও বিশ্বাস হয় না নিজের পরিচিত মানুষটা আর নেই। প্রিয়জনের মৃত্যু, শূণ্যতা হয়ে থেকে যায় সারাজীবন। তবে প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর সকল ধর্ম, দেশ, জাতির কাছে মৃত্যুকে শোক, গাম্ভীর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হলেও আফ্রিকার দেশ ঘানাতে রয়েছে ব্যতিক্রম উদাহরণ।
আরও পড়ুন,
- আপনি কেনো রাস্তার বামদিক ব্যবহার করেন?
- “ফেয়ার এন্ড লাভলী” থেকে হঠাৎ কেনো “গ্লো এন্ড লাভলী”
- বাংলাদেশের আয়তন কত? যেভাবে হলো ২,৪৭,৬৭৭ বর্গ কিঃমিঃ
পূর্বে গোল্ড কাস্ট খ্যাত ঘানাতে মৃত্যুকে করা হয় উদযাপন। শুধুমাত্র উৎসবই নয়, মৃত্যুর কফিন নিয়ে করা হয় গানের তালে নাচও। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে এমনই এক নৃত্যদলের ভিডিও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন স্যুট বুট পরা ব্যক্তি কফিন কাঁধে নিয়ে নাচতে নাচতে চলেছে কবর দিতে।
খুব বেশিদিন চালু হয়নি ঘানাতে এ রীতি। কফিন বাহক দলটির নেতার নাম বেঞ্জামিন আইডু। ২০১০ সালে তিনি পলবেয়ারার কোম্পানি শুরু করেন। তার কোম্পানি জনপ্রিয়তা পায় ২০১৩সালে এলিজাবেথ নামের এক প্রতিবেশীর মায়ের মৃত্যুতে। এলিজাবেথের মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিল তাঁর কফিন বহনকারী পুরুষদের একটি বিশেষ স্টাইলে নাচতে হবে। বেঞ্জামিনের এরপর তাদের কফিন বহনের কাজের সাথে নাচ যোগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
আইডু জানান, এরপর থেকে কেউ মারা গেলে তার লাশ বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের কাছে আসলে আমরা প্রথমেই জিজ্ঞাসা করি,’আপনি কি আপনার মৃত সদস্যের শেষ বিদায় স্মরণীয় এবং আকর্ষণীয় করতে চান? পরবর্তীতে তারা আমাদের এই পরিষেবা নিতে রাজি হলে আমরা সৎকার অনুষ্ঠানে ড্যান্স করে তাদেরকে আনন্দ দেই।’
আরও পড়ুন,
- জুম অ্যাপ : যে গোপন সূত্র ধরে গুগল-মাইক্রোসফটকে ছাপিয়ে সাফল্যের শীর্ষে
- টেম্পল রান: যেভাবে পেলো অভূতপূর্ব সাফল্য ও জনপ্রিয়তা
- ফ্লাশ টয়লেট আবিষ্কারের পেছনের গল্প
২০১৫ সালে ট্র্যাভেলিন সিস্টার নামের একজন ইউটিউবার তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রথম একটি কফিন নাচের ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওটি ভিডিওটি ৪ মিলিয়ন বার ইউটিউবে দেখা হয়েছে।দ্বিতীয় ভিডিওটি ২০১৭ সালে বিবিসি প্রকাশ করে। বিবিসির ভিডিওতে কফিন নাচ নিয়ে একটি ছোট্ট ডকুমেন্টারি দেখানো হয়।
তবে মিমি হিসেবে এটা কখন প্রথম আপলোড করা হয় তা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে ২৬ ফেব্রুয়ারির একটি মিম সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। ফেসবুক ব্যবহারকারী বিগস্কাউট নানা প্রম্পেথ একটি ভিডিও আপলোড করেন, যাতে দেখা যায় পল্লবেয়াররা নাচতে নাচতে দুর্ঘটনাক্রমে একটি কফিন ফেলে দেয়। তার ভিডিওতে গত এপ্রিল পর্যন্ত ২,৯০০ এর বেশি রিয়্যাক্ট হয়, ৪,৬০০ টি শেয়ার এবং ৩,৫০,০০০ বার দেখা হয়।
কফিন নাচ ভিডিওটিতে ব্যবহৃত গান
কফিন নাচের মিমিগুলোতে থাকা কনপ্রিয় মিউজিক টোনটি ভাইসটোন এবং টনি আইজির লেখা ‘অ্যাস্ট্রোনোমিয়া’। ২০১০ সালে প্রথম গানটি প্রকাশিত হয়। ভাইসটোন ডাচ ইলেক্ট্রনিক মিউজিকাল জুটি রুবেন ডেন বোয়ার এবং ভিক্টর পুল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি মিউজিক কোম্পানি। অন্যদিকে টনি আইজি একজন রাশিয়ায় সঙ্গীত শিল্পী।
সবমিলিয়ে মৃত্যুকে উৎসবের রূপ দিতে ঘানাবাসীর আয়োজনের কমতি নেই। কফিন নাচের জন্য পলবেয়ারার ভাড়া থেকে শুরু করে আকর্ষণীয় ঢঙ ও আকৃতির কফিন ক্রয় সাথে আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে অনুষ্ঠান। খাবার, পানীয়,গান, নাচতো আছেই এছাড়াও ভাড়া করা হয় ব্যান্ডপার্টি।
নাচের বৈচিত্র্য
বেঞ্জামিন আইডু ও তার দলের সদস্যরা কফিন ঘাড়ে নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে নেচে থাকে। তাদের নাচের কৌশলগুলো সবই আধুনিক ঘরানার। নাচের সময় তার কফিন ঘাড়ে নিয়ে গানের সাথে দুই হাত নেড়ে সাথে তালে তালে পা মিলিয়ে নাচে। আবার কখনও কখন মাটিতে বসেও চলে তাদের নাচ। আবার শূন্যে ছুড়ে দেওয়া হয় কফিন। একবারতো শূন্যে ছুড়তে যেয়ে দূর্ঘটনাবসত কফিনটি নিচে পড়ে যায়।
আরও পড়ুন,
- নিউরালিংক: কাজ করতে হাত নয়, প্রয়োজন কেবল চিন্তার
- পৃথিবীতে কয়টি দেশ আছে ? ১৯৩ নাকি ২৪৯?
- ফুটবলের ডাকনাম সকার যেভাবে!
কফিন নাচে ব্যবহৃত পোশাক
সাধারণত ঘানায় শোকের রঙ কালো হওয়ায় পলবেয়ারারদের পোশাকেও কালো প্রাধান্য পায়। তবে বেঞ্জামিন আইডুর দল কালোর পাশাপাশি কালো-লাল এবং নীল-সাদা পোশাকও পরিধান করে। সাথেতো কোট-স্যুট-বুট ও টুপিতো আছেই।
কফিনে বৈচিত্র্য
এধরণের শোকউৎসবে কফিনেও আছে বৈচিত্র্য। মৃত্য ব্যক্তির শখ কিংবা পেশার আলোকে সাজানো হয় বিভিন্ন আকার ও নকশার কফিন। কফিনগুলো রঙবেরঙের হয়ে থাকে। এখানে কোকাকোলার বোতল, ছুতার হাতুড়ির মতো কফিন, জুতো প্রস্তুতকারকের জন্য একটি জুতা আকৃতির কফিন, বিমানের মতো আকারের কফিনও রয়েছে।
আরও পড়ুন,
- ইন্টারনেট আসক্তি ছুঁড়ে ফেলুন চার বৈজ্ঞানিক উপায়ে!
- ইকোনো যুগঃ যেভাবে হারিয়ে গেলো এক প্রজন্মের নস্টালজিয়া
- হিংস্রতম প্রাণী হায়নার হাসি রহস্য
খরচ
এধরণের আয়োজনে ঘানাবাসী কয়েকশো বা হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সবকিছু মিলিয়ে তাদের ১৩,০০০ ঘানিয়ান সিডি বা প্রায় ২৪০০ ডলার পর্যন্ত ব্যয় হয়।
কফিন নাচ নিয়ে বিশ্বে বিতর্ক থাকলেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে ঘানায়। ঘানাবাসী বিশ্বাস করেন, শেষ যাত্রা হোক মনে রাখার মতো। তাদের বিশ্বাস জীবনের শেষ দিনটি যদিও দুঃখের হয় তারপরও মৃত ব্যক্তির শেষ দিনটি স্মরণীয় করে রাখা প্রয়োজন। তবে এই বিশ্বাস নতুন কিছু নয়। ঘানার প্রাচীন সংস্কৃতির একটি অংশ এটি। ঘানাবাসী মৃতদের এতটাই শ্রদ্ধা করে যে শেষযাত্রাকে তাদের সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।
[ করোনা সংকটের মধ্যেই আলোচনায় মানুষের মস্তিষ্ক খাওয়া অ্যামিবা। যার সংক্রমণে মৃত্যুর হার ৯৭শতাংশ। মানুষের মস্তিষ্ক খাওয়া অ্যামিবা সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন,
মানুষের মস্তিষ্ক খাওয়া অ্যামিবা আসলে কি? কিভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?