ফ্রিল্যান্সিং কি? বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত একটি পেশার নাম ফ্রিল্যান্সিং। বলা হয়, এটি এ যাবৎকালের সবচেয়ে মুক্ত ও স্বাধীন পেশা। আর তাই আপনার মতো সম্ভাব্য ফ্রিল্যান্সারের জন্য আজকের এই লিখাটি। আজ জানবো, ফ্রিল্যান্সিং কি, ফ্রিল্যান্সিং কাকে বলে, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো, ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ, ফ্রিল্যান্সিং শেখার বই, ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন, ফ্রিল্যান্সিং কোথায় শিখব, ফ্রিল্যান্সিং একাউন্ট, ফ্রিল্যান্সিং বাংলাদেশ, ফ্রিল্যান্সিং কেন করব ইত্যাদি।
অর্থাৎ, ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে পরিপূর্ণ গাইডলাইন পাবেন এই এই লিখাটিতে।
[lwptoc]
আপনি হয়ত ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং বা ইন্টারনেট থেকে আয় করার কথা ভাবছেন ও কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো এর নির্দেশনা খুঁজে থাকবেন। যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই স্বাভাবিক। কারণ আমরা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে তেমন শিক্ষা পাইনা। তাই ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো’ এর সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে ইন্টারনেট এর দ্বারস্থ হতে হয়।
আবার, ইউটিউব বা ফেসবুকেও ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর নামে প্রতারণার জাল বিছিয়ে অনেক ফটকাবাজ নিঃষ্ব করছে সম্ভাবনাময়ী ফ্রিল্যান্সারদের।
পড়ুনঃ টাকা ইনকাম করার অ্যাপ (সেরা ২০ টি অ্যাপের তালিকা)
শুরু করা যাক ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন:
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং হলো চুক্তিভিত্তিক এক ধরণের পেশা, যেখানে ফ্রিল্যান্সার নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না নিয়েও, তার দক্ষতা (Skill) এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অনেক ক্লায়েন্টকে সেবা প্রদান করে থাকে।
ফ্রিল্যান্সিং কাকে বলে
সহজভাষায় ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) হলো নিজের দক্ষতার বিনিময়ে টাকা উপার্জন করা। অর্থাৎ, দক্ষতাকে টাকায় রূপান্তর করা।
কোনো ৩য় ব্যক্তি যখন আপনার কোনো দক্ষতাকে নিজের কাজে ব্যবহার করে আপনার চাহিদা অনুযায়ী পারিশ্রমিক দিয়ে থাকে তাকেই ফ্রিল্যান্সিং বলে।
যেমন ধরুন, আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং এর দক্ষতা আছে, আর অন্যদিকে এক উদ্যোক্তার হাতে টাকা আছে কিন্তু তার ব্যবসায়ের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা প্রয়োজন, এখন ঐ ব্যবসায়ী আপনাকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজটি করে দেয়ার অনুরোধ করবে আপনার ডিমান্ড অনুযায়ী পারিশ্রমিকের বিনিময়ে।
পড়ুনঃ উদ্যোক্তা হতে হলে কি করবেন? দ্যা আনফেয়ার এডভান্টেজ (বুক রিভিউ)
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ
ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজ রয়েছে। একসময় ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাটাগরির মধ্যেই অন্তর্গত ছিলো, যেমন-
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ওয়েব ডিজাইন
- ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
- কনটেন্ট রাইটিং
- প্রোগ্রামিং
- ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি ইত্যাদি
তবে এখন প্রতিটি ক্ষেত্র’তেই অনেকগুলো ভাগ তৈরি হয়েছে, যেমন :
ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ –
- ফেসবুক মার্কেটিং
- ফেসবুক পেইড প্রোমোশন
- ফানেল মার্কেটিং
- ভিডিয়ো এড ক্রিয়েশন
- সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
- ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং
- প্রফেশনাল ফেসবুক পেজ ক্রিয়েশন
- ডাটা এনালিটিকস
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি কি শেখানো হয় –
- বিজনেস কার্ড ডিজাইন
- ব্যানার ডিজাইন
- ফ্লায়ার ডিজাইন
- পোস্টার
- মক-আপ তৈরি
- ইন্টেরিয়র ডিজাইন
- 3D Animation
- মোশন গ্রাফিক্স
- UI/UX Design
ওয়েব ডিজাইন কি কি শিখতে হয় –
- ল্যান্ডিং পেজ তৈরি
- ওয়ার্ডপ্রেস সাইট তৈরি
- কাস্টম CMS তৈরি
- ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন
- ওয়েবসাইটের গতি বৃদ্ধি
- WIX সাইট সেটাপ ইত্যাদি
ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন
ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য যে অনেক কিছুর প্রয়োজন, তা নয়। আমাদের অধিংকাংশেরই এগুলো আছে। নিচে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন তা উল্লেখ করে দেয়া হলো –
- একটি স্মার্টফোন (আবশ্যিক)
- একটি কম্পিউটার
- ইন্টারনেট সংযোগ
- নূন্যতম ইংরেজি ভাষা জ্ঞান (কথা চালিয়ে যাবার মতো)
- অনলাইনে একটিভ থাকার মানষিকতা
- নতুন কিছু শেখার ক্ষুধা
- সর্বদা নিজের কাজটির সম্পর্কে আপডেটেড জ্ঞান রাখা ও
- একটুখানি ব্রেইন।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে সবার আগে বুঝতে হবে আপনি ঠিক কোন কাজটি করতে চান। অর্থাৎ ঠিক কোন স্কিল ডেভেলপ করে আপনি একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হতে চান, আগে তা ঠিক করুণ।
ধরুন, বেশ কিছুদিন রিসার্চ করার পর আপনি বুঝলেন আপনার জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে কাজ করাটা সবচেয়ে ভালো হবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে আরেকটু ভেতরে প্রবেশ করতে হবে, যেমনটি ইতোমধ্যেই উপরে পড়েছেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন এর ভেতরেও বেশ কিছু সাব ক্যাটাগরি আছে। তার মধ্যে পোস্টার ও ব্যানার ডিজাইন টা আপনার কাছে সবচেয়ে এনজয়িং (উপভোগ্য) মনে হলো, এখন পোস্টার ও ব্যানার ডিজাইন নিয়ে কাজ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।
কঠিন কাজ আপাতত শেষ। এবার ব্যানার পোস্টার ডিজাইন নিয়ে যত প্রকার ইন্টারনেট রিসোর্স আছে সব ঘাটতে থাকুন। ইউটিউব ভিডিও দেখুন। তবে সাবধান, এত দ্রুতই কোনো পেইড কোর্সে ঢুকে যাবেননা। আগে নিজের কাজের সেক্টর টা বুঝুন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে মোটামুটি আইডিয়া হয়েগেলে, সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করে টুকটাক কাজ করতে থাকুন। আপনার প্রিয় ফুটবল টিম কিংবা গানের ব্যান্ড দের লোগো বা তাদের ফেসবুক পেজ এ শেয়ার করা কোনো ব্যানার টা দেখে দেখে বানানোর চেষ্টা করুন।
ব্যানার / লোগো নকল করা শেষ হলে তা নিজের কাছে গচ্ছিত না রেখে Behance, LinkedIn, Instagram এ অবশ্যই শেয়ার করুন। যেনো আপনার সার্কেলের মানুষগুলো এ বিষয়ে জানতে পারে। এর ফলে তাদের কোনো প্রোগ্রামের জন্য লোগো / ব্যানার প্রয়োজন হলে সবার আগে আপনাকে জানাবে। তারাই হবে আপনার প্রথম ক্লায়েন্ট।
নিজের সার্কেলের সাথে কাজ করে অভিজ্ঞতা সঞ্চার করবার পর অবশ্যই Fiverr, UpWork, Freelancer, People Per Hour ও Guru এর মতো মার্কেটপ্লেস গুলোরে প্রোফাইল তৈরি করুন।
নিজের করা কাজগুলো (Jpg ফরমেটে) সেখানে আপলোড করুন। যেনো আপনার কাজের ডেমো বিদেশি Buyer রা দেখতে পায়। এর ফলে আপনার কাজ পাবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
অভিনন্দন, এখন আপনাকে একজন ফ্রিল্যান্সার বলা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং শেখার বই
ফ্রিল্যান্সিং শেখার জনপ্রিয় বাংলা ও ইংরেজি বইগুলো নিচে দেয়া হলো:
- ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার – আল আমিন কবির
- ফ্রিল্যান্সার ডট কম – মাহবুবুর রহমান
- অনলাইন আর্নিং – আইটি বাড়ি
- ইল্যান্স গাইডলাইন – আল-আমিন কবির
- ফ্রিল্যান্সিং এবং ইন্টারনেট আয়
- ফ্রিল্যান্সিং গুরু
- হাবলুদের ফ্রিল্যান্সিং – জয়িতা ব্যানার্জী
ফ্রিল্যান্সিং কোথায় শিখব
ফ্রিল্যান্সিং কোথায় শিখব এটা খুঁজলে কখনোই এই সেক্টরে কিছু করতে পারবেননা। আপনাকে জিজ্ঞেস করতে হবে, “ব্যানার ডিজাইন কোথায় শিখব“। যখন নিজের প্রশ্নটাকে সরু করতে পারবেন তখনই প্রকৃত লক্ষে পৌছুতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত বিভিন্ন স্কিল (Skill) অর্জন করার অন্যতম সেরা প্লাটফর্ম হলো-
- YouTube
- Udemy
- SkillShare
- Linkedin Learning
- Coursera
নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন ও প্রতারণা সতর্কতা
একজন নতুন ফ্রিল্যান্সার বা ইন্টারনেট মার্কেটার হিসেবে আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হলো মিসগাইড না হওয়া। বাংলাদেশে গত ৮/১০ বছরে বহু “ফ্রিল্যান্সার” নামধারী প্রতারকের আবির্ভাব হয়েছে, তাদের কাজই হলো ইউটিউব বা ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত মোটিভেশনাল কথাবার্তা বলে নতুনদের মধ্যে আস্থা স্থাপন করা ও এক পর্যায়ে তাদের কাছে নিজেদের কোর্স বিক্রি করা। মূলত এটিই তাদের মূল ইনকাম। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে তাদের নাম গন্ধও নেই।
তাই প্রতারক থেকে সাবধান।
আর, পুরো লিখায় আমি ইউটিউব’কে রিসোর্সের জন্য সবচেয়ে সেরা উৎস বলে বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছি। কথাটি মাথায় রাখুন। এখানে সার্চ করতে শিখুন। যা পারেননা তা বুঝতে আগে ইউটিউবের সাহায্য নিন। প্রয়োজনে ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত গ্রুপগুলোতে খোঁজ নিন। অভিজ্ঞদের লিখা পড়ুন।
ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে শেষ কিছু কথা
ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হবার জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার তা হলো নিজের শেখার ক্ষুধা ও কাজ বোঝার ক্ষমতা। কোনো ভিডিও তে অমুক টুল এর কাজটা এভাবে দেখিয়েছে, তাই আমিও সবসময় এভাবেই করব। অন্যভাবে করতে যাবোনা, এমন মানসিকতা থাকলে শিখতে পারবেননা। কোনো টুল যতভাবে ব্যবহার করা যায় তার সব উপায়েই এক্সপেরিমেন্ট করুন।
ইনশাআল্লাহ, সফল ফ্রিল্যান্সার আপনি হবেনই।